ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন রাজনীতিবিদরা। এটা নিয়ে ইতোমধ্যে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো ও সহযোগী জাতীয় পার্টি।
আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকালে এ রিটটি দায়ের করেন তারা। রিটকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।’
গত ২৩ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র অধিকার পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত ২১ অক্টোবরর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্যানারে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। পরে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। ১৯ অক্টোবর আলোচনা শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বলতাম হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ চাই। আজকে হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন আওয়ামীবিহীন বাংলাদেশ করতে হবে।’ সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চলে গেছে, আমরা ভেবে ভেবে খুশি হই। কিন্তু খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদের চর-অনুচর এখনো বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সচিবালয়, পুলিশ, মিলিটারি, যেখানে বলেন, এদের চর রয়ে গেছে। এদের রেখে কোনো পরিস্থিতিতেই আপনি পরিপূর্ণ গণতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম করতে পারবেন না।’
আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই। সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা এবং দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে একটা জাহান্নামে পরিণত করেছিল। সেই আওয়ামী লীগ এখন মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে। ১৯৯৬ সালে অতীতের অপরাধের জন্য তারা হাতজোড় করে বিনা শর্তে মাফ চেয়ে বলেছিল, আমাদের একবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিয়ে দেশপ্রেম প্রকাশের সুযোগ দিন। জনগণ তাদের সে সুযোগ দিয়েছিল, সেবার ক্ষমতায় এসে তারা কাড়ি কাড়ি লাশ ও রক্ত উপহার দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। তিনি বলেন, গণহত্যার দায়ে সাব্যস্ত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমরা চাই আওয়ামী লীগ ও তার দোসরসহ ১৪ দলের রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল বালুর মাঠে আয়োজিত উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাশেদ খান।
অবিলম্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার পলায়নের পরও আমলাতন্ত্রে পতিত স্বৈরাচারের লোকজন রয়ে গেছে। অবিলম্বে পতিত সরকারের বিচার করতে হবে। সব শহীদের হত্যার বিচার করতে হবে। ২৬ অক্টোবর রাজধানীর তোপখানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্টের আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে সাড়ে ১৫ বছর এই দেশের সানুষের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। একই সঙ্গে তিনি ১৪ দলসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পাবনায় পিসিসিএস কমিউনিটি সেন্টারে ২৬ অক্টোবর এনডিএমের আঞ্চলিক প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ দাবি জানান ববি। তিনি আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে এ দেশের আন্দোলনরত সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে ‘নির্বিচারে হত্যার’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও দল নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট জরিমানাসহ খারিজ চেয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের। সংবিধানে রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা খর্ব করবে না সরকার। বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের অনেক অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে মানুষ। অনেক গুম-খুন হয়েছে। সেগুলোর বিচারের জন্য আইন ও আদালত রয়েছে।