অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের নথিতেও শাকিব খান একজন ধর্ষক!

নির্মাণাধীন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার সহ-প্রযোজককে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকালে ধর্ষণ করেছেন শাকিব খান, এমন অভিযোগ তুলেছেন সিনেমাটির প্রযোজক রহমত উল্লাহ। এছাড়াও তিনি অভিনেতার বিরুদ্ধে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাসেরসহ গুরুতর সব অভিযোগ এনেছেন। যা এখন সিনেমা পাড়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

১৫ মার্চ প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে লিখিত আকারে সেসব অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। এরপরদিন বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টায় গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় শাকিব খানকে নিয়ে যান তার প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাস। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনো সমঝোতা হয়নি।

এরপর ১৮ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে বিমানে ওঠার পর প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করতে গুলশান থানায় যান শাকিব খান। কিন্তু সেখানে মামলা না নেয়ায় ১৯ মার্চ তিনি ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে একটি অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। সেসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শাকিব দাবি করেন, ওই প্রযোজক ভুয়া, মিথ্যাবাদী। তিনি শাকিবের নামে মিথ্যাচার করে পালিয়ে গেছেন।

তার বিপক্ষেও অস্ট্রেলিয়া থেকে মন্তব্য করেছেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমি পালিয়ে আসিনি। কাজের টানেই অস্ট্রেলিয়া এসেছি। কারো ভয়ে পালিয়ে আসিনি। আমি আবার আসব। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো সকল প্রমাণ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এদিকে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো তথ্য প্রমাণ থাকলে সেগুলো কেন সামনে আনছেন না? এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে শাকিবের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের ধর্ষণ মামলার রিপোর্ট পাঠান তিনি। সেখানে দেখা যায়, বর্বর এক ধর্ষণের বর্ণনা। পুলিশের নথিতে উঠে এসেছে মামলার বাদী ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী অ্যানি সাবরিন নিজেই। মামলার স্বাক্ষী প্রযোজক রহমত উল্লাহ। যাকে রিপোর্টে অ্যানির ‘আংকেল’ উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম ম্যাথিউ জন ক্রুকসন।

মামলাটি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট জর্জ পুলিশ স্টেশনে। রিপোর্টে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত শাকিব খান ওরফে রানা। ক্যারিয়ারের প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েই এমন ধর্ষণকান্ড ঘটিয়েছেন এই নায়ক। শাকিব খানের বিষয়ে পুলিশ রিপোর্টে এমন তথ্যই মিলেছে।

পুলিশ রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে নভোটেল দ্য গ্র্যান্ড প্যারেড অ্যাপার্টমেন্ট ৭২১ ব্রাইটন লা স্যান্ডস হোটেল কক্ষে রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত, দুই ঘণ্টা অ্যানিকে ধর্ষণ করেন শাকিব খান। সেসময় ওই নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালান ঢালিউডের শীর্ষ এই নায়ক।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করে মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ধর্ষণকারী শাকিব খান মধ্যপ অবস্থায় মাতাল হয়ে অ্যানি সাবরিনকে যোনি ও পায়ুপথে নির্মমভাবে যৌনচার চালিয়েছেন। এ সংক্রান্ত রিপোর্টের যাবতীয় কাগজ ও তথ্য ইতিমধ্যেই আমাদের নতুন সময়’র হাতে এসেছে।

পুলিশ সেই প্রতিবেদনে আরও বলেছে, শাকিব খান রানা একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা। ভুক্তভোগী অ্যানি সাবরিন তার আঙ্কেল রহমত উল্লাহ’র ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। সাবরিন ও উল্লাহ বাংলাদেশি সিনেমার কাজ শুরু করেছে। যার শুটিং অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে হবে। অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সঙ্গে অ্যানি সাবরিনের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করেন অ্যানি।

পুলিশের এসব তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় শাকিব খানের সঙ্গে। কিন্তু তার কোন সাড়া মেলেনি। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার প্রকাশিত টিজারে দেখা যায় আশিকুর রহমান পরিচালিত এ সিনেমার প্রযোজনায় আছে বাংলাদেশের ভারটেক্স প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সিনেমাটির কো-প্রডিউসার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিনেফেক্টস। যার কর্ণধার রহমত উল্লাহ নিজেই। অথচ, শাকিব খান বলছেন রহমত উল্লাহ প্রযোজনার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণদিত হয়ে মিথ্যাচার করছে।

এনবিএস/ওডে/সি

news