বুঝতে পারছেন সামনে কতটা অন্ধকার: চঞ্চল চৌধুরী

সম্প্রতি অভিনয় শিল্পী সংঘের একটি অনুষ্ঠানে হিরো আলমের উত্থান ‘রুচির দুর্ভিক্ষে’ উল্লেখ করে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেন থেকে সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন ব্যক্তিরা কথা বলছেন বিষয়টি নিয়ে। অনেক তারকা মামুনুর রশীদের মন্তব্যকে সময়পোযোগী দাবি করেও কথা বলছেন। তেমনি অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও এ বিষয়ে মতামত জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এ ব্যাপারে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে শুরুতেই লিখেছেন, ‘মাধ্যমটা সামাজিক নাকি অসামাজিক?’ এছাড়াও স্ট্যাটাসের একপর্যায়ে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘বুঝতে পারছেন কি সামনে কতটা অন্ধকার?’

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেইনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমরা বাক স্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মতো যা খুশি করছে, যা ইচ্ছা বলছে। প্রশ্নটা এখানেই। আধুনিকতা আর সম-অধিকারের ঝাণ্ডা তুলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অপব্যবহার করছেন না? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে, সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন?’

তিনি লেখেন, ‘ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান “আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?” বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারতো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুন বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’

অভিনেতা ফেসবুক রিলে প্রকাশিত ক্লিপসের ব্যাপারেও কথা বলেন। লেখেন, ‘ফেসবুকে “রিল” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধাচরণ করি। সেন্সরবিহীন এসব অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে? এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারি না? সেই সঙ্গে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। সে যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবেন, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না।’

তিনি লেখেন, ‘তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়, দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও, আমাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেয়া কোনো ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসূরি হিসেবে। কারণ, আপনি বা আমি ঠিক-বেঠিক বা উচিত-অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদন প্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি সামনে কতটা অন্ধকার?

সবশেষ এই অভিনেতা লেখেন, ‘চুপ করে থাকা রাজনৈতিক, সংস্কৃতিবান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি, প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যেকোনো উপায়ে টেনে হিঁচড়ে নীচে নামানো হবে। তাই এখনো সময় আছে মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন। এই ব্যর্থতা প্রথমত রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত তথাকথিত সংস্কৃতি কর্মীদের। যাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া।’

এনবিএস/ওডে/সি

news