রাম-রাবণের দ্বৈরথে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ জিৎ, পর্দাজুড়ে শুধুই ভায়োলেন্স

“ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স ভায়োলেন্স”! দিনকয়েক আগের এক দক্ষিণী ছবির এই সংলাপ যেন বারবার প্রতিফলিত হল টলিউড সুপারস্টার জিতের (Jeet) নতুন ছবি ‘রাবণ’-এ (Raavan Review)। তবে কি রাবণ সেই দক্ষিণের ছবির নকল? না, তা একেবারেই নয়। এমনকি সেই ছবির মানের ধারেকাছেও নয়। তবে পর্দাজুড়ে জিতের মারকাটারি অ্যাকশন আর রক্ত দেখার সময় কারও কারও ওপরের সংলাপটি মনে পড়তে বাধ্য।

সরাসরি ছবির কথায় আসা যাক। গল্পের একদিকে রয়েছেন রাম মুখার্জী, একটি কলেজের সাংবাদিকতার অধ্যাপক তিনি। অন্যদিকে রয়েছে রাবণ, যে লড়ছে আমাদেরই চারপাশে ভাল মানুষের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ানো কিছু অমানুষের বিরুদ্ধে (Raavan Review)। এই লড়াই চলেছে ছবির আদ্যোপান্ত জুড়ে। রাম-রাবণের এই দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত জিতবে কে? তা জানার জন্য অবশ্য একবার হলে গিয়ে ছবিটা দেখে আসতে হবে।

প্রথমেই বলে রাখা ভাল, এই ছবিতে রাম এবং রাবণ- দুই চরিত্রেই অভিনয় করেছেন জিৎ। তবে চরিত্রদুটি কি আলাদা নাকি একজনই? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য রহস্য, এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ক্লাইম্যাক্সে। ছবি দেখতে বসে এই টুইস্টের জন্যই চলে দর্শকের টানটান অপেক্ষা। এখানেই গল্পের সাফল্য।

রাবণের ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে জিৎ বরাবরের মতো ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’। টকটকে লাল বাঁ চোখ, মুখে হিংস্রতার ছাপ স্পষ্ট- সিনেমাহলের মধ্যে বারবার বাচ্চাদের চোখ ঢেকে দিচ্ছিলেন বাবা-মায়েরা। এর আগে কোনও বাংলা ছবিতে এমন মারকাটারি ‘ভায়োলেন্স’ দেখা গেছে কি? হয়তো না। ওটিটির যুগে বড়পর্দায় ‘ভায়োলেন্স’ দিয়েই বাজিমাত করার চেষ্টা করেছেন নির্মাতারা।
রাবণ তো জমেছে, তবে হতাশ হতে হবে রামরূপী জিৎকে দেখে। হিংস্র রাবণের রূপে তিনি যতটা সাবলীল, রামের চরিত্রে রয়েছে ঠিক ততটাই জড়তা। হতে পারে দুটো ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে একটার উপরেই বেশি ফোকাস করেছেন জিৎ। অন্যটা খানিক অবহেলিত হয়েছে। কিন্তু স্বীকার করতে হবে তিনিই এই ছবির ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’।
পর্দায় আড়ষ্ট দেখাল নবাগতা লহমা ভট্টাচার্যকেও। ট্রেলারে তাঁকে যতটা ছটফটে, প্রাঞ্জল দেখিয়েছিল ছবিতে তা চোখে পড়ল কই? সাংবাদিকতা থেকে সরাসরি অভিনয়ে আসা লহমাকে দেখেই বোঝা যায়, বিগ স্ক্রিনে তিনি নতুন। এক্সপ্রেশন নিয়ে আরও অনেক ঘষামাজা করতে হবে তাঁকে। বরং পুলিশ অফিসার জাহানের চরিত্রে তনুশ্রী অনেক বেশি নজর কেড়েছেন।

 বাকি ছোট ছোট চরিত্রগুলিতে আর কাউকেই তেমন চোখে পড়েনি। খরাজ, বিশ্বনাথের মতো অভিনেতারা ছবিতে কমিক রিলিফ আনার চেষ্টা করেছেন যথাসাধ্য। কিন্তু ঠিক জমাতে পারেননি।

তবে নজর কেড়েছে এই ছবির অ্যাকশন। শুধুই নায়কের ঘুষিতে ভিলেনের উড়ে যাওয়া নয়, আগের তুলনায় অনেক অভিনবত্ব এসেছে মারপিটের দৃশ্যে, অ্যাকশন অনেক সাবলম্বী হয়েছে। বাংলা ছবিতে এটা কম পাওনা নয়। শাওয়ার থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি হোক বা ট্রাম ডিপোয় পিষে ভিলেনকে মারা, সিনেমার প্রত্যেকটি অ্যাকশন দৃশ্যেই নতুনত্ব চোখে পড়বে। নির্মাতারা এই অ্যাকশনের পিছনে অনেকটাই খেটেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

ভাল হয়েছে ক্যামেরার কাজও। ছবির তিনটে গান, সঙ্গে নায়িকার লাস্যময়ী নাচ, দেখতে শুনতে ভাল লাগবে ঠিকই, তবে গানগুলো গল্পের সঙ্গে তেমন খাপ খায় না। বরং জোর করেই গানগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া মনে হল। জাভেদ আলি, অ্যাশ কিংয়ের মতো শিল্পীদের গান থাকলেও মনে থেকে যাবে অরিজিতের গলায় ‘কেউ জানে না’ গানটা।
টুকরো টুকরো ভালমন্দ মিশিয়ে তৈরি রাবণ দেখে মানুষ কখনও হাসবে কখনও কাঁদবে। কখনও আবার ভয়ে শিউরে উঠবে। শেষ দৃশ্যে জিতের গলায় ‘রাবণদের বধ করতে কখনও কখনও রাবণকেই প্রয়োজন হয়’ ডায়লগ শুনে একটা প্রশ্ন মাথায় ঘোরাফেরা করতেই পারে, রাবণ কি আবার ফিরে আসবে?খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২

news