মানুষের মন জয় না করলে জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি আসবে না: ডা. ফারুক আবদুল্লাহ

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ডা. ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, মানুষের মন জয় না করলে জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি আসবে না। আমি শান্তি পাব না যতক্ষণ না আপনি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মন জয় করবেন।

রাজধানী দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. ফারুক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরে প্রতিদিনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এমন কোনো দিন নেই যেদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে না। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি বড় অংশ সেনা সদস্যে ভরে গেছে। সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের মন জয় করতে পারে না। এর পরিবর্তে, সেখানে ভালবাসার প্রয়োজন। তাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) এটা বুঝতে হবে।’ 

গত ২৬ মে, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে জম্মু-কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈয়েবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ সংগঠনের ২৬ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।  কাশ্মীর জোনের পুলিশ মহাপরিদর্শক বিজয় কুমার বলেন, ‘এ বছর এ পর্যন্ত, ২৬ জন বিদেশী সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।’    

ডা. ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, এ সময়ে সারা দেশে বিদ্বেষের বীজ বপন করা হচ্ছে এবং দেশবাসীকে একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যা আমাদের এড়াতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে হয়ে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করলে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব।  

তিনি বলেন, কথায় কথায় মুসলমানদের পাকিস্তানে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু এই ধরনের পরামর্শ দেওয়া লোকদের বোঝা উচিত যে তাদের বুজুর্গরা এই দেশটিকে নিজেদের বলে মনে করেছেন এবং তারা এখান থেকে কেউ যাবেন না।  

এ প্রসঙ্গে আজ (সোমবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভয় দেখিয়ে করছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়। এখন অবস্থাটা হয়েছে এমন নজরুলের ভাষায়, যে যত ভণ্ড ধড়িবাজ, আজ সেই তত বলবান। কেন্দ্রে যে সরকারটা চলছে, সঙ্ঘ পরিবারের (আরএসএস) সরকার। সম্পূর্ণ ভণ্ডামি ও মিথ্যাচারের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা কাশ্মীরসহ বহু রাজ্যে ভয় ও ত্রাসের শাসন চালু করেছে। একটা দেশ চলে, গণতন্ত্রের ভিত্তিতে, আইনের ভিত্তিতে, সমতার ভিত্তিতে। কিন্তু কাশ্মীরে কোনও সমতা নেই।’    
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ড. ইমানুল হক আরও বলেন, ‘গোটা ভারতজুড়ে দলিত এবং মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কাশ্মীরে এটা সর্বোচ্চ মাত্রায়। ফারুক আবদুল্লাহ ঠিক বলেছেন। যদি ওখানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়, ওখানে যদি নির্বাচিত সরকার কাজ না করে, ওখানে যদি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব না থাকে তাহলে তা বেশিদিন চলতে পারে না’ বলেও ড. ইমানুল হক মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, শেখ আবদুল্লাহ যখন ভারতের প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা বলেছিলেন, তখন এ দেশে এমন নেতা ছিলেন যাদেরকে আপন মনে করা যেত। মানুষ হিন্দু-মুসলিমকে আলাদা করে দেখতো না। কিন্তু বর্তমানে মানুষদেরকে মধ্যে ভাগাভাগি করা হচ্ছে। আস্থার অভাবে মানুষের মধ্যে সম্পর্কও ক্ষীণ হচ্ছে, কিন্তু আস্থার এই শক্তিকে কমতে দেওয়া উচিত নয়।

দেশের মুসলমানদের আওয়াজ না তোলায় গণমাধ্যমকেও আক্রমণ করেন ফারুক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে শুধু একটি পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে। এ জন্য ‘মিডিয়া সেল’গঠন করতে হবে বলে জানান তিনি। এর মাধ্যমে মুসলমানদের উচিত তাদের কথা দেশের সামনে রাখার চেষ্টা করা।

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় এলে শুধু মুসলিম জনসাধারণই নয়, মুসলিম নেতারাও বিক্রি হয়ে যায়। এ ধরনের নেতারা মুসলমানদের দুর্দশার জন্য দায়ী এবং তাদের সতর্কতার সাথে চিহ্নিত করা উচিত।  

আজ (সোমবার) ‘অমর উজালা’গণমাধ্যমে প্রকাশ, দিল্লিতে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে সিদ্ধান্ত হয় যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ আদিবকে। তার সভাপতিত্বে কমিটি সারাদেশ সফর করবে এবং সমগ্র দেশের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ করবে।খবর পার্সটুডে /এনবিএস/২০২২/একে

news