অগ্নিপথ’: মোদীর দশা কৃষি আইন, জমি অর্ডিন্যান্সের মতো হবে না তো

গত বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প (Agnipath) ঘোষণা করার পরের তিন দিনে দু’দফায় ওই প্রকল্পের শর্ত শিথিল করল কেন্দ্রীয় সরকার। ওই প্রকল্পে চার বছর পর অবসর নেওয়া অগ্নিবীরদের জন্য অসম রাইফেলসে চাকরিতে অগ্রাধিকারের কথা প্রথম দিনই ঘোষণা করেছিল সরকার। আজ শনিবার জানানো হয়েছে, অসম রাইফেলসে তাদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখা হবে। আজ একই সঙ্গে অগ্নিপথ-প্রকল্পে আবেদনে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা আরও বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

কিন্তু তাতেও বিক্ষোভে রাশ টানা যায়নি। আজও প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। বিহারে বিক্ষোভারীদের ডাকা বনধকে সমর্থন জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবির। সেখানে শাসক জোটের প্রধান শরিক মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পার্টি জনতা দল ইউনাইটেড আবার অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।

সেনায় চুক্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্তে বিরোধী দলগুলি আপত্তি তুললেও, বিহার বাদে কোথাও বিরোধীরা আন্দোলনের পথে যায়নি। সরকারের পক্ষে সেটাও একটা সমস্যা। কারণ বিরোধীরা পথে নেমে বাধা দিলে সরকার বিরোধী চক্রান্ত বলে পাল্টা প্রচারে যেতে পারত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একবারে বিশ-বাইশ বছরের ছেলেরা বিক্ষোভে সামিল হয়েছে, যাদের ষোলোয়ানাই এই প্রথম প্রতিবাদে পথে নেমেছে। ফলে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে মন্তব্য করতেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে শাসক দল ও সরকারকে। কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিচ্ছিন্নতাবাদী, খালিস্তানপন্থী বলে গালমন্দ করার পরিণতি সরকারের অজানা নয়। প্রতি আক্রমণের ফল হয়েছিল মারাত্মক। মোদী ও বিজেপির বিরুদ্ধে একক্কাট্টা হয়ে গিয়েছিল শিখ সমাজ।


অগ্নিপথ বিরোধী আন্দোলনজনিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আগামীকাল রবিবার সেনা কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছেন। এখনও পর্যন্ত সরকারের শীর্ষমহল মনে করছে, নতুন স্কিমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে বিক্ষোভ-আন্দোলনে রাশ টানা যাবে। ইতিমধ্যেই আর্মি ঘোষণা করেছে এক-দু’দিনের মধ্যে তারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেবে। বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে ২৪ জুন। নৌসেনাও আগামী সপ্তাহে শুরু করবে। তারা এখনও দিনক্ষণ জানায়নি।

কিন্তু এত কিছুর পরও বিক্ষোভ থামার কোনও লক্ষণ নেই। যা থেকে বিজেপিরও অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ‘অগ্নিপথ’-এর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে (Narendra Modi) তৃতীয়বারের জন্য পিছু হটতে হতে পারে। বছর শেষে হিমাচল প্রদেশ ও গুজরাতে বিধানসভার ভোট। প্রধানমন্ত্রী ঘন ঘন নিজের রাজ্য সফর করছেন। আজও তিনি সারাদিন গুজরাতে থাকবেন। গত পরশু হিমাচলপ্রদেশে জনসভা ছিল। সেই সভায় যাওয়ার রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করে ‘অগ্নিপথ’ বিরোধী আন্দোলনকারীরা।

বিহারের মতো হিংসাত্মক আন্দোলন না হলেও অগ্নিপথ-এর বিরুদ্ধে হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে অসন্তোষ অনেক বেশি। কারণ, পাহাড়ি রাজ্যগুলি থেকে সেনায় যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেশি। বস্তুত এই সব রাজ্যে সেনা-অর্থনীতি বলে একটি কথাও চালু আছে। বেতন ও পেনশন বাবদ সেনা খাত থেকে বিপুল অর্থ এই রাজ্যগুলিতে যায়। দলের অনেকেই মনে করছেন, ভোটের আগে এই অগ্নিপথ আন্দোলন বেশি দূর গড়াতে দেওয়া ঠিক হবে না। বরং, আপাতত কিছুদিনের জন্য প্রকল্প রূপায়ণ স্থগিত রেখে দেশব্যাপী এর ভাল দিকগুলি প্রচার করা হোক। খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news