ভারতের রাজস্থানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বরকে দেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি টাকার যৌতুক, যার মধ্যে রয়েছে পেট্রোল পাম্প, ২১০ বিঘা জমি ও বিপুল নগদ অর্থ। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

ভারতের রাজস্থানের নাগৌর জেলার ঝাডেলি গ্রামে মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের একটি বিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই বিয়েতে পাত্র শ্রেয়াংশ চাবাকে পাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়েছে। যৌতুকের তালিকা মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠানে, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে নেটিজেনদের মধ্যে হতবাক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

যৌতুকের তালিকায় ছিল একাধিক সোনার গহনা, তিন কেজি রূপো, একটি পেট্রোল পাম্প, ২১০ বিঘা জমি এবং কয়েক কোটি টাকা নগদ। প্রতিটি উপহার ঘোষণার পর উপস্থিত অতিথিরা হাততালি দিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন। এই বিশাল উপহার প্রদান করেছেন পটলিয়া পরিবারের চার ভাই—ভাওয়ারলাল, রামচন্দ্র, সুরেশ এবং ডা. করণ পটলিয়া, যারা বর শ্রেয়াংশের মামা ও চাচাতো মামা। শ্রেয়াংশ হলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগবীর চাবা ও কমলা দেবীর পুত্র।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজস্থানের সাবেক বিজেপি সভাপতি ডা. সতীশ পুনিয়া এবং জনপ্রতিনিধি হরিরাম কিনওয়াড়া। পটলিয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী, ব্যাংক ম্যানেজার এবং ঠিকাদার। রাজস্থানের মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ে ‘মায়রা’ নামে পরিচিত এই যৌতুক প্রথাকে ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নাগৌরে এই প্রথা উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়।

এর আগে, গত এপ্রিলে নাগৌরের সাদোকান গ্রামে নাথুরাম সাঙ্গওয়া তাঁর মেয়ে সীমার বিয়েতে ৩ কোটি ২১ লক্ষ রুপির মায়রা দিয়েছিলেন। এছাড়া শেখাসানি, ধিঙ্গাসারা ও জাখান গ্রামে যথাক্রমে ১৩ কোটি ৭১ লক্ষ, ৮ কোটি এবং ১ কোটি রুপির মায়রা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রথা মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অংশ হলেও, এত বিশাল অর্থব্যয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করছেন, এই ব্যয়বহুল প্রদর্শন সমাজে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা এবং চাপ সৃষ্টি করছে।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মায়রা প্রথা মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে এর বাড়াবাড়ি প্রকৃতি সমাজে অসমতা এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে বলে সমালোচনা উঠছে। কেউ কেউ এই প্রথাকে সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখলেও, অনেকে এটিকে অপচয় এবং যৌতুকের একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। এই ঘটনা ভারতের যৌতুকবিরোধী আইনের প্রেক্ষিতেও প্রশ্ন তুলেছে।

রাজস্থানের এই বিয়ের অনুষ্ঠান ও বিপুল যৌতুকের ঘটনা একদিকে ঐতিহ্যের প্রতিফলন, অন্যদিকে সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের মায়রা প্রথা ভালোবাসার প্রতীক হলেও, এর অতিরঞ্জিত প্রকাশ সমাজে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই প্রথা নিয়ে আলোচনা এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

news