নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। এক দিকে তার শিক্ষাজীবন ও ব্যক্তিগত বন্ধন, অন্য দিকে স্বামীর অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড—এই সবকিছুই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বারাণসীস্থ বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানেই পরিচয় হয় তার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর সঙ্গে, যিনি ছিলেন নেপালি কংগ্রেসের যুবনেতা।

দুর্গা প্রসাদ সুবেদী ১৯৭৩ সালে নেপালের ইতিহাসে প্রথম প্লেন ছিনতাই-এর নেতৃত্ব দেন। কাঠমান্ডু অভিমুখী রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের একটি বিমান ভারতীয় সীমান্ত শহর ফরবিসগঞ্জে অবতরণে বাধ্য করা হয়। ছিনতাইকারীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান, যা পরে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়। এ অভিযানে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালা ও সুশীল কৈরালারও সংশ্লিষ্টতার কথাও শোনা যায়।

পরবর্তীতে সুবেদী ভারতে আত্মগোপন করেন এবং ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার পর গ্রেফতার হয়ে দুই বছর কারাভোগ করেন। পরে তাকে নেপালের হাতে হস্তান্তর করা হয়।

অন্যদিকে, সুশীলা কার্কি সবসময় ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রাখেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে ভারতের ‘বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিএইচইউতে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন,
“আমি অনেক ভারতীয় বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষককে এখনো মনে করি। ভারত সবসময় নেপালের ভালো চেয়েছে।” তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সম্পর্কে নিজের ‘ভালো ধারণা’ থাকার কথাও জানিয়েছেন।

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই মোদী কার্কিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক্স-এর পোস্টে তিনি লিখেছেন,
“নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের জন্য মাননীয়া সুশীলা কার্কিকে আন্তরিক অভিনন্দন। ভারত নেপালের ভাইবোনদের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

ভারতের শিক্ষাঙ্গনেই কার্কির রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শুরু হয়েছিল। বিএইচইউর সাবেক অধ্যাপক দীপক মালিক বলেছেন,
“পড়াশোনার সময় থেকেই আমাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিরপেক্ষ, সৎ ও দুর্নীতিবিরোধী একজন নেতা।”

এই পটভূমি এবং শিক্ষাজীবনকে কেন্দ্র করে সুশীলা কার্কির ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে ভারতের শিক্ষাজীবন ও বন্ধন তাকে ভারতপন্থি হিসেবে তুলে ধরছে, অন্যদিকে স্বামীর অতীত ‘প্লেন ছিনতাইয়ের ইতিহাস’ এই সম্পর্ককে আরও বিতর্কিত করেছে।