কাশ্মীরের স্কুলে হিন্দু ভজন সঙ্গীত শিক্ষায় আপত্তি মেহবুবার, বিরোধিতা কেন, প্রশ্ন ফারুকের

 জম্মু-কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সের বোঝাপড়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। সেই জল্পনায় এবার ঘি ঢাললেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। হিন্দু ভজন সঙ্গীত নিয়ে আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির (Mehbooba Mufti) বক্তব্যের সমালোচনা করে আজ ফারুক বলেন, ভজন নিয়ে আপত্তি কীসের! আমিও ভজন শুনি। গলা মেলাই।
ফারুক আরও বলেন, কোনও মুসলমান হিন্দু ভজন গাইলেই তিনি হিন্দু হয়ে যান না। তাঁর আরও সংযোজন, অজমের শরিফে হিন্দুরাও যান। তারা কি সব মুসলমান হয়ে যান। ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। এই দেশে ধর্ম পরিবর্তন এত সহজ নয়।
বিতর্কের সূত্রপাত দুদিন আগে। মেহবুবার (Mehbooba Mufti) একটি টুইট ঘিরে। তিনি টুইটে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) একটি স্কুলে পড়ুয়াদের রঘুপতি রাঘব রাজারাম…. গাওয়ানো হচ্ছে। মেহবুবার বক্তব্য, এই ভাবেই কাশ্মীরে হিন্দুত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর বিরোধিতা করলেই ইউএপিএ আসনে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের মেয়েদের রাজকীয় সংবর্ধনা, ফুলের পাপড়ি বিছানো পথে দেশে ফিরলেন সাবিনারা
মেহবুবার এই বক্তব্যেই সমালোচনায় মুখর হন ফারুক। তিনি মুখ খুলতেই ফের জল্পনা শুরু হয়েছে তা হলে কি ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক জোড়া লাগতে চলেছে?
জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার সাংবিধানিক রক্ষাকবচ ৩৭০ নম্বর (Jammu Kashmir) অনুচ্ছেদ নরেন্দ্র মোদী সরকার বাতিল করার পর কাশ্মীরে বিরোধী দলগুলি জোট বাঁধছিল। ক্রমে সেই বোঝাপড়া ভেঙে যাচ্ছে, মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তিন বছর আগে ওই রাজ্য থেকে সংবিধানের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে সেখানে নির্বাচন বকেয়া। ক্রমে ভোটের হাওয়া গরম হতে শুরু করেছে সেখানে। এরই মধ্যে আপাত অবিশ্বাস্য একটি সম্ভাবনা নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজনীতির হাটে-বাজারে জোর আলোচনা ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লাদের পার্টির সঙ্গে বিজেপির নির্বাচনী বোঝাপড়ার সম্ভাবনা নিয়ে।
জল্পনার পিছনে ছিল ন্যাশনাল কনফারেন্সের সহ-সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমরের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রবিন্দর রায়নার টুইট সংলাপ।
ওমর জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি রাজ্য সভাপতির একটি বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গত শুক্রবার বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একে অপরের শত্রু নয়। রাজনীতি বিভাজন এবং ঘৃণার জন্যও নয়।’
ওমরের এই মন্তব্য টুইটার-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। বহু মানুষ মন্তব্য করেন ওমরের টুইটের জবাবে। অনেকেই এই মন্তব্যকে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে ব্যাকডোর বোঝাপড়া হিসাবে অভিহিত করেছেন।
উপত্যকার আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে বিজেপির বোঝাপড়া নতুন নয়। রাজ্যে আগের নির্বাচনেই বিজেপি ও পিডিপি জোট করে সরকার গড়েছিল। তবে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করার আগেই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায় বিজেপি।
আবার কেন্দ্রে এনডিএ এবং ইউপিএ, দুই সরকারের আমলেই মন্ত্রী ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি তথা জম্মু-কাশ্মীরের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। এ বছর জুনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফারুককে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী করার ব্যাপারে সব দল সহমত হয়েছিল। কিন্তু ফারুকই রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি রাজ্য-রাজ্যনীতিতেই আপাতত থাকতে চান। এখন ওমর এবং বিজেপি নেতার টুইট ঘিরে অনেকেই দুয়ে দুয়ে চার করা শুরু হয়েছিল আগেই। বুধবার জল্পনায় ঘি ঢাললেন ফারুক।
গত সপ্তাহে চর্চার সূত্রপাত হয় একটি ভিডিওতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবিন্দর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একজন রত্ন বলে উল্লেখ করেন। রায়না বলেন, ‘যখন আমি ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে বিধানসভার ছিলাম, তখন ওঁকে আমার রাজ্যের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একজন রত্ন মনে হয়েছিল। তাই আমরা দু’জন বন্ধু।’
ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও আনেন বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, ওমর আবদুল্লাই প্রথম ব্যক্তি যিনি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আমাকে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন।

রায়নার টুইটের জবাবে ওমর বলেন, রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করলে তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে একে অপরকে ঘৃণা করা শোভা পায় না। একের পর এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘বিভাজন এবং ঘৃণা নিয়ে রাজনীতি কেন? রাজনীতি কোথায় বলে যে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করার জন্য আমাদের একে অপরকে ব্যক্তিগতভাবে ঘৃণা করতে হবে? আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার শত্রু নয়!

এই সাদামাটা সৌজন্যমূলক টুইটকে উপত্যকার রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ মোটেই রাজনীতির বাইরে রাখছে না। জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের বিষয়ে ন্যাশনাল কনফারেন্সের আপত্তির কথা কারও অজানা নয়। ২০১৯-র অগাস্টে ওই সিদ্ধান্ত বলবৎ করার সময় রাজ্যের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক, ওমর এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু লক্ষণীয় হল, মোদী সরকার ফারুক ও ওমরকে আগে মুক্তি দেয়। মেহবুবাকে পরে মুক্তি দেওয়া হলেও এখনও তাঁর চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ বলবৎ আছে। প্রায়ই তাঁকে গৃহবন্দি করা হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ। যা থেকে অনেকেই মনে বলছেন, কিছুই অসম্ভব নয়। ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং বিজেপি তেল আর জলের মতো হলেও রাজনীতিতে রসায়নে এই দুইয়ের মিশে যাওয়ার নজির তো নেহাৎ কম নয়। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, একটি বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় বাপ বেটা দুজনের নামেই ইডির মামলা আছে। দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীই ইডির মুখোমুখী হয়েছেন।

খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

খবর দ্য ওয়ালের /এনবিএস/২০২২/একে

news