গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বয়কটের ঘোষণা, সরকারি দফতরে গরুর পালের হানা


ভারতে বিজেপিশাসিত গুজরাট সরকার গরুদের জন্য আশ্রয়গৃহ চালাতে আর্থিক সহায়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার প্রতিবাদে হাজার হাজার গরু রাস্তার উপর ছেড়ে দিয়েছে গরু আশ্রয় কেন্দ্রের ট্রাস্টিরা।

গুজরাটে নিবন্ধিত পশু আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য তহবিল না দেওয়ায় সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ দাতব্য ট্রাস্টগুলো সরকারি দফতর এবং মহাসড়কগুলোতে গরুর পাল ছেড়ে দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। আসন্ন গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বয়কট করার আহ্বানের মধ্যে বনাসকাঁন্ঠার তালুকগুলোতে মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় এবং আদালতের মতো সরকারি ভবনগুলোতে কয়েক হাজার গরু প্রবেশের একটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। রোববার পর্যন্ত ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত প্রায় ১৭৫০টি গোশালা কর্তৃপক্ষ ওই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এ সব আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে সাড়ে ৪ লাখের বেশি গবাদিপশু।    

এদিকে, আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, রাজ্য সরকার ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না করলে রাজ্য জুড়ে গৌঅধিকার যাত্রা শুরু করা হবে। আগামী ১ অক্টোবর বনসকাঁন্ঠার থরড় থেকে ওই যাত্রা শুরু হবে, যাতে শতাধিক ধর্মীয় নেতা ও গো-ভক্তরাও যোগ দেবেন বলে দাবি করা হচ্ছে।    

গত (শুক্রবার) উত্তর গুজরাটের বনাসকান্ঠা ও পাটন জেলায় বিভিন্ন রাস্তায় গবাদিপশু ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। একই সময়ে যারা কচ্ছতে আশ্রয়কেন্দ্র চালাচ্ছেন, গতকাল (রোববার) তারা সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে চাবি তুলে দিয়ে বলেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেবেন না।

গণমাধ্যমের সাথে যেসব সংগঠনের লোকজনের কথা হয়েছে তারা বলেছেন, সোমবার থেকে গুজরাটের অবশিষ্ট সৌরাষ্ট্র এবং মধ্য জেলাগুলোতে একই ধরনের আন্দোলন দেখা যাবে। তারা বলেন, অনেক গরু এখনো রাস্তায় ও সরকারি চত্বরে থাকলেও কিছু ফিরে এসেছে। গুজরাট গৌ সেবা সংঘের দাবি- বিক্ষোভের জন্য তিনটি জেলার কমপক্ষে ৭০ জনকে সাময়িকভাবে আটক করা হয়েছিল।

সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে বানাসকাঁন্ঠার বিজেপি নেতারা গান্ধিনগরে গেছেন। গুজরাটের কৃষি, পশুপালন এবং গো-প্রজনন মন্ত্রী রাঘবজি প্যাটেল বলেছেন, সরকার প্রতিবাদ এবং এর কারণগুলো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী চান এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক। আশ্রয়কেন্দ্রে  তহবিল দেওয়ার বিলম্বের বিষয়ে প্যাটেল বলেন, ‘আমরা বাজেটে একটি বিধান রেখেছিলাম এবং ১ এপ্রিল থেকে এটি বাস্তবায়নের ঘোষণাও দিয়েছিলাম, কিন্তু প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা করা যায়নি। আগামী দু/এক দিনের মধ্যে ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে।’    

গুজরাটের বনাসকাঁন্ঠা জেলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার হাজার গরু রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত মার্চ মাসে গুজরাট সরকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য গোশালা অপারেটরদের ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ৭ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তারা সেই টাকা পাননি।   

আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব ধর্মশাস্ত্রী কিশোরভাই বলেন, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। প্রসঙ্গত, গত পাঁচদিন ধরে গোশালা পরিচালনাকারীদের আন্দোলন চলছে। একইসঙ্গে এভাবে গরু ছেড়ে দেওয়ার ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যা দূর করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এতে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
খবর পার্সটুডে/২০২২/এনবিএস/একে

news