উত্তর প্রদেশে মুসলিম কৃষককে হত্যার অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ১২ পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর

ভারতে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলায় জিশান হায়দার নকভি নামে এক মুসলিম কৃষককে হত্যার অভিযোগে কর্মকর্তাসহ ১২ জন পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

ওই পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তিনজন উপ-পরিদর্শকও রয়েছেন।তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে চল্লিশ বছর বয়সী মুসলিম কৃষককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। নিহতের বিরুদ্ধে গরু জবাইয়ের অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। নিহতের স্ত্রী গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সমস্ত অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নেবেন না।  

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জিশান হায়দার নকভি মারা যান। তার স্ত্রী আফরোজ নকভি গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছি কিন্তু যতক্ষণ না আমার স্বামী ন্যায়বিচার পাচ্ছেন ততক্ষণ সংগ্রাম চলবে। এই পুলিশ সদস্যরা আমার তিন সন্তানকে এতিম করেছে। তাদের কারাগারে থাকা উচিত। সবাইকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমি শান্ত হব না।

সাহারানপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) অনিল কুমার এফআইআর নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়ার দু’দিন পর ১২ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সম্পর্কিত আইপিসি ধারাগুলো চাপানো হয়েছে।  

সাহারানপুরের থেটকি গ্রামে ৪০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন জিশান হায়দর নকভি। তিনি সমাজবাদী পার্টির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ ঈসা রাজার চাচাতো ভাই ছিলেন। ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের অভিযানে তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন, তারপরে তিনি মারা যান। জিশানের পরিবার বলছে, তাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। 


নিহতের স্ত্রী আফরোজ নকভি এবং তাদের তিন সন্তান
কিন্তু পুলিশের দাবি- তারা থেটকি গ্রামের কাছে জঙ্গলে একটি গরু জবাই করার খবরের ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জিশান হায়দার নকভি। তার কাছে একটি দেশী অস্ত্র ছিল, সেখান থেকে পালানোর সময় তিনি দুর্ঘটনাক্রমে নিজেকে গুলি করেন। পুলিশ দাবি করেছিল তারা ঘটনাস্থল থেকে একটি মৃত গরু এবং পশু কাটার সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে। নকভিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি মারা যান।এবং অন্য পাঁচ অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

আজ (মঙ্গলবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘জনসত্তা’ সূত্রে প্রকাশ, জিশান হায়দারকে হত্যার পর তার স্ত্রী আফরোজ ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এসএসপি অফিসে অভিযোগ দায়ের করেন। আফরোজ তার অভিযোগে বলেন, আমার স্বামী যখন বাড়িতে ছিলেন, তখন পুলিশ তাকে পাশের মাঠে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। আমি আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার চাই। আফরোজের অভিযোগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ অনেক জায়গায় অভিযোগ করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি আফরোজ অবশেষে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এর পরে লক্ষনৌ বেঞ্চ সাহারানপুর আদালতকে বিষয়টি দ্রুত নিস্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। সাহারানপুর আদালত একটি এফআইআর নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গোপালী পুলিশ পোস্টে নিযুক্ত ৫৩ বছর বয়সী হেড কনস্টেবল সুখপাল সিং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি অন্যতম একজন অভিযুক্ত।

দেওবন্দ কোতোয়ালির ইনচার্জ হৃদয় নারায়ণ সিং বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, আমরা যখন পুলিশ সদস্যদের বর্তমান পোস্টিং সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করব, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হব।
খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২৩/একে

news