গতকাল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) ক্যাম্পাসে এক বিশেষ আন্তর্জাতিক মিলনমেলা ঘটে গেল। চীনের ইউনান প্রদেশের ১৪ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিনিধিদল এখানে এসে বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষাখাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিলেন। ইউনান প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক ঝাও ডেরং-এর নেতৃত্বে এই দলে ছিলেন ইউনানের শীর্ষ দশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা।
এনএসইউ'র উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, "চীনের সঙ্গে আমাদের একাডেমিক সম্পর্ক দিন দিন গভীর হচ্ছে। বিশেষ করে চীনা ভাষা শেখা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখেছি। ইউনান প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারিত করতে চাই আমরা।"
ঝাও ডেরং তাঁর বক্তব্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, "ইউনান ও বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষার সেতুবন্ধন দিন দিন মজবুত হচ্ছে। আমরা একাডেমিক বিনিময়, যৌথ গবেষণা এবং ভাষা শিক্ষাকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। বিশেষ করে তিনটি ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা বাড়াতে চাই - প্রতিভা উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠানিক বিনিময় এবং ভাষা শিক্ষার প্রসার।"
এনএসইউ'র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর ড. সিনথিয়া ম্যাককিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "আমাদের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আমরা চীনের সঙ্গে আমাদের এই সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত করতে চাই।"
ইউনানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব এবং সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো উপস্থাপন করেন। ইউনান ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডুয়ান জিংউ প্রস্তাব দেন এনএসইউতে একটি চীনা ভাষা বিভাগ খোলার। তিনি বলেন, "আমরা ব্যবসায় প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ প্রোগ্রাম চালু করতে আগ্রহী।"
কুনমিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট পান জুয়েজুন একটি অভিনব প্রস্তাব নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, "আমরা 'শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানবিকতা' ভিত্তিক একটি বিশেষ সহযোগিতা মডেল তৈরি করতে চাই, যেখানে শিক্ষার্থী বিনিময়, যৌথ গবেষণা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় একসাথে হবে।"
চীনা চিকিৎসা শেখানোর ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন ইউনান ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ মেডিসিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিসেস ইউ জি বলেন, "আমরা ফার্মাসিতে যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করতে চাই। এছাড়া আকুপাংচার এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা শেখানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে পারি আমরা।"
হংহে ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি ঝাও রুজি সংস্কৃতি বিনিময়ের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, "শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিনিময় আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করবে। আমরা কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এই কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।"
বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ইউনান ভোকেশনাল কলেজ অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেন ইউকিয়ং বলেন, "আমরা 'চীনা ভাষা + বৃত্তিমূলক শিক্ষা' নামে একটি বিশেষ মডেল নিয়ে কাজ করছি। ফাইন্যান্স ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমরা এনএসইউ'র সঙ্গে কাজ করতে চাই।"
এনএসইউ'র বিভিন্ন স্কুলের ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা এই প্রস্তাবগুলোকে স্বাগত জানান। স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডিন প্রফেসর এ কে এম ওয়ারেসুল করিম বলেন, "ব্যবসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আমরা যৌথ গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রাম চালু করতে আগ্রহী।"
সেমিনার শেষে প্রতিনিধিরা এনএসইউ কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষায় গান ও কবিতা শুনে তারা মুগ্ধ হন। ঝাও ডেরং বলেন, "এই তরুণরাই ভবিষ্যতে আমাদের দুই দেশের বন্ধনের দূত হবে।"
এই সফর শুধু একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
#নর্থ_সাউথ_ইউনিভার্সিটি #চীন_বাংলাদেশ_শিক্ষা_সহযোগিতা #ইউনান_প্রদেশ #কনফুসিয়াস_ইনস্টিটিউট #আন্তর্জাতিক_শিক্ষা_বিনিময়


