তেহরান/ইসলামাবাদ, ২৭ অক্টোবর ২০২৫: দুই প্রতিবেশী দেশ ইরান আর পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে! তেহরানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ মুদাসসির টিপু গত ১৯ অক্টোবর জানিয়েছেন, পাকিস্তান সরকার দীর্ঘ প্রক্রিয়া আর ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ শুনে ইরানের সঙ্গে যৌথ পণ্যবিনিময় বার্টার বাণিজ্য বাড়াতে নতুন কার্যকর নির্দেশনা জারি করেছে।
টিপু তার এক্স পুরোনো টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “পাকিস্তান ইরানের সঙ্গে পণ্যবিনিময় বাণিজ্য উৎসাহিত করতে নতুন এসআরও জারি করেছে।”

তিনি আশা করছেন, এই নির্দেশনা দুই দেশের বাণিজ্যের মাত্রা অনেক বাড়াবে আর ভিত্তি আরও বৈচিত্র্যময় করবে।
পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় ২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া অনুমোদন করে, যাতে ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পণ্যবিনিময় চুক্তি পুনর্বিচারের কথা আছে। কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেয়।

সংযোগ বাড়ানোর আরেকটা বড় পদক্ষেপ হলো, ২৪ অক্টোবর ইসলামাবাদে ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফারজানে সাদেক আর পাকিস্তানের ফেডারেল সমুদ্র-বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ জুনায়েদ আনোয়ার চৌধুরীর বৈঠক। তারা নৌপরিবহনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে কথা বলেন।

দুই দেশ বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন আর লজিস্টিক রুটের মান বাড়াতে একমত হয়েছে। সরাসরি সমুদ্রপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের লাইন চালুর প্রস্তাবও দিয়েছে, যা বাণিজ্য, পর্যটন আর আঞ্চলিক যোগাযোগকে জীবন্ত করে তুলবে।
দুই মন্ত্রী বলেছেন, আঞ্চলিক সংযোগ বিনিয়োগ আকর্ষণ, বাণিজ্য বাড়ানো আর মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা বন্দর-নৌপরিবহন উন্নয়ন, সমন্বিত নেটওয়ার্ক আর সমুদ্র-স্থল-রেলপথে দেশ দুটোকে আরও কাছে আনার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পাকিস্তানের নৌমন্ত্রী বলেন, “ইরান-পাকিস্তান সরাসরি জাহাজ লাইন শুধু বাণিজ্য বাড়াবে না, ইরান-ইরাক যাওয়া জিয়ারতকারীদের জন্য সস্তা ও সহজ ভ্রমণের বিকল্প হবে।”

ইরানের সড়কমন্ত্রী প্রস্তাব স্বাগত জানিয়ে বলেন, দুই দেশের বন্দরগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যের দরজা হতে পারে। উন্নত সমুদ্র-পরিবহন যোগাযোগ দিয়ে নতুন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ খুলবে।
ইরান-পাকিস্তান বাণিজ্য ও যোগাযোগ বাড়লে দুই দেশের জন্য বিরাট লাভ। সাংস্কৃতিক-ধর্মীয়-ঐতিহাসিক মিল থাকা এই প্রতিবেশীরা সক্ষমতা কাজে লাগালে টেকসই আঞ্চলিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

অর্থনৈতিকভাবে, ইরান তার বিশাল জ্বালানি আর কৌশলগত অবস্থান দিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারে। পাকিস্তানের তরুণ জনগোষ্ঠী আর বড় বাজার ইরানি পণ্যের জন্য সুযোগ। রেল-সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন বাণিজ্য সহজ করবে, খরচ কমাবে।

শিক্ষা-সংস্কৃতি-গণমাধ্যমে সহযোগিতা মানুষের বোঝাপড়া বাড়াবে। ছাত্র বিনিময়, যৌথ প্রদর্শনী, বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা সাহায্য করবে।

নিরাপত্তা-সীমান্ত সহযোগিতা পাচার-সন্ত্রাসবাদ কমাতে সাহায্য করবে। যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আর তথ্য বিনিময় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে।

সবমিলিয়ে, ইরান-পাকিস্তানের এই প্রচেষ্টা শুধু অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক লাভই নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি-স্থিতিশীলতা-সহযোগিতা জোরদার করবে।

 

news