বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া নিয়ে আসামের রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কংগ্রেসের এক সভায় এই গান পরিবেশনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে উত্তেজনা। এর জেরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বুধবার (২৯ অক্টোবর) নির্দেশ দিয়েছেন—এই ঘটনায় জড়িত কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সোমবার (২৭ অক্টোবর) শ্রীভূমি জেলার এক কংগ্রেস সভায় দলের একজন সিনিয়র নেতাকে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি গাইতে দেখা যায়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি ভারতের জাতীয় অনুভূতির প্রতি “গুরুতর অপমান”।

তিনি আরও দাবি করেন, “ওই গানটি এমনভাবে গাওয়া হয়েছে, যেন এটি ভারতের জাতীয় সংগীত।”

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কংগ্রেস নেতা বিদ্যু ভূষণ দাস গানটি গেয়েছিলেন কংগ্রেস সেবা দলের এক সভায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গানটি মূলত ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা এবং স্বদেশি আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে রচিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘটনার সঙ্গে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ তত্ত্বের সংযোগ খুঁজে বের করেন। তার দাবি, এটি পাকিস্তান-সমর্থিত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে একটি বই উপহার দেন, যার প্রচ্ছদে এমন এক মানচিত্র দেখা যায়, যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশও অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়।

অন্যদিকে, লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ এই ঘটনায় কংগ্রেস নেতাদের পক্ষ নিয়ে বলেন, “‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেই লেখা হয়েছিল। এটি বাঙালির আবেগ, সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বিজেপির আইটি সেলের এই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দেয়, তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উত্তরাধিকার সম্পর্কে কতটা অজ্ঞ। বিজেপি একদিকে বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতিকে অবমূল্যায়ন করে, আবার অন্যদিকে নির্বাচনী স্বার্থে বাঙালিভাষী জনগণকে ব্যবহার করে।”

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামজুড়ে এখন চলছে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক উত্তেজনা, যেখানে ‘আমার সোনার বাংলা’ নতুন করে ছুঁয়ে গেছে পরিচয় ও রাজনীতির সংবেদনশীল প্রশ্নকে।

 

news