ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হারিকেন মেলিসা। মার্কিন আবহাওয়াবিদরা একে বলেছেন “বিপর্যয়কর ও প্রাণঘাতী” ঝড়। ইতিমধ্যে দেশটিতে ঝড়ের আগাম প্রভাবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। 

মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, মেলিসার সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৭৫ মাইল (২৮২ কিলোমিটার), যা ক্যাটাগরি-৫ মাত্রার—হারিকেনের সবচেয়ে ভয়ংকর স্তর। এনএইচসি সতর্ক করেছে, মঙ্গলবার সকালে ঝড়টি জ্যামাইকার স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।

এনএইচসি বলছে, বাতাসের গতি ও নিম্নচাপের শক্তির দিক থেকে মেলিসা এখন পর্যন্ত ২০২৫ সালের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর গতিবেগ ধীর হওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি করবে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মেলিসা শুধু চলতি বছরের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ই নয়, বরং জ্যামাইকার ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হতে পারে।

সোমবার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ জানায়, ঝড়ের আগেই অন্তত তিনজন মারা গেছেন।

এনএইচসি সতর্ক করেছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত “মারাত্মক ও প্রাণঘাতী বাতাস, বন্যা এবং জলোচ্ছ্বাস” জ্যামাইকার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।

এনএইচসি’র পরিচালক মাইকেল ব্রেনান বলেন,

“মঙ্গলবার পর্যন্ত ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। কেউ যেন ঘরের বাইরে না যায়। ঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের সময় বাইরে বের হওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে।”

সংস্থাটির হিসাবে, আগামী চার দিনে জ্যামাইকায় প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।

জ্যামাইকার শিক্ষামন্ত্রী ডানা মরিস ডিকসন বিবিসিকে বলেন,

“আমরা এমন ঝড় আগে কখনো দেখিনি। অক্টোবরজুড়ে বৃষ্টি হয়েছে, ফলে মাটি ভিজে ও দুর্বল। এখন মেলিসার ভারী বৃষ্টি যুক্ত হলে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস হবে।”

পরিস্থিতি মোকাবিলায় জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হলনেস দ্বীপের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন,

“প্রত্যেক জ্যামাইকানকে প্রস্তুত থাকতে হবে, ঘরে অবস্থান করতে হবে এবং স্থানান্তরের নির্দেশ মানতে হবে। আমরা একসঙ্গে এই ঝড় মোকাবিলা করব এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব।”

শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশজুড়ে ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র সক্রিয় করা হয়েছে, যেখানে মানুষ বিনামূল্যে থাকতে পারবেন।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন,

“আমি বিশ্বাস করি না এই অঞ্চলে এমন কোনো অবকাঠামো আছে যা ক্যাটাগরি ৫ ঝড় সহ্য করতে পারবে। তাই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও স্থানচ্যুতির আশঙ্কা রয়েছে।”

জ্যামাইকার উপকূলে এখন চলছে উদ্ধারকাজ, সতর্কতা, এবং এক অনিশ্চিত অপেক্ষা—বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে একটি ছোট দ্বীপ দেশ।

 

news