যুক্তরাজ্যে ‘অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট (ওএসএ)’ কার্যকর হওয়ার পর থেকেই বড়সড় পরিবর্তন এসেছে প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট দেখার প্রবণতায়। বয়স যাচাই বা এজ চেক বাধ্যতামূলক করার পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন সাইট পর্নহাবের ট্রাফিক জুলাইয়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ কমে গেছে, এমন দাবি করেছে সংস্থাটি নিজেই।
পর্নহাবের দাবি, যেসব সাইট এখনো এই নতুন নিয়ম মানছে না, তারাই উল্টোভাবে অপ্রত্যাশিতভাবে লাভবান হচ্ছে। যদিও বিবিসি এই তথ্য যাচাই করতে পারেনি, তবে গুগলের ডেটা বলছে—আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে সাইটটির সার্চ প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। এই পতন হতে পারে ব্যবহারকারীদের কনটেন্ট দেখা কমে যাওয়ার কারণে, আবার কেউ কেউ ভিপিএন বা বিকল্প উপায়ে সাইটে প্রবেশ করছেন, সেটিও সম্ভাব্য কারণ।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে কেউ যদি প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট সাইটে প্রবেশ করতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই ফেসিয়াল আইডেন্টিফিকেশনসহ বয়স যাচাইয়ের প্রমাণ দিতে হবে, যাতে নিশ্চিত হয় তিনি ১৮ বছরের বেশি বয়সী।
দেশটির যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকম জানিয়েছে, গত ২৫ জুলাই আইন কার্যকর হওয়ার পর তিন মাসে যুক্তরাজ্যে পর্ন সাইট ভিজিট এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। সংস্থাটি বলছে, শিশুদের অরক্ষিতভাবে কনটেন্টের সামনে আসা রোধ করাই এই আইনের মূল উদ্দেশ্য—যা এখন সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাদের মতে, “এই আইন ‘বয়স নিরপেক্ষ ইন্টারনেট যুগের অবসান’ ঘটিয়েছে।”
তবে অনেকেই বয়স যাচাই এড়াতে ভিপিএন ব্যবহারে ঝুঁকছেন। সাইবার নিউজের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ১ কোটিরও বেশি ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের ড. হ্যান স্টিগম্যান বলেছেন, “গোপনীয়তার ভয়ে অনেকেই বয়স যাচাই করছেন না। তাই তারা ভিপিএন ব্যবহার করছেন।” এতে ভিজিটরদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সাইবার নিউজের গবেষক আরস নজরোভাস জানান, ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড ১,৮০০ শতাংশ বেড়ে গেছে, যার মানে পর্নহাবের ‘হারিয়ে যাওয়া’ ব্রিটিশ দর্শক আসলে অন্য পথে সাইটে যাচ্ছেন—তবে তারা এখন ‘নন-ইউকে ট্রাফিক’ হিসেবে গণনা হচ্ছে।
পর্নহাবের মূল কোম্পানি আইলো-এর নির্বাহী অ্যালেক্স কেকসি মনে করেন, “এই নতুন নিয়ম বাস্তবে কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব।” তাঁর মতে, অফকমের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার ওয়েবসাইটে একইসঙ্গে এই নিয়ম মানানো ‘অসাধ্য কাজ’।
কেকসি দাবি করেছেন, কিছু সাইট নিয়ম না মেনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহারকারীদের টানছে, যা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এই তথ্য তারা অফকমকে দিয়েছে। তবে অফকম জানিয়েছে, তারা ঝুঁকি ও ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে তদন্তের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করছে। তাদের তথ্যমতে, শীর্ষ ১০টি জনপ্রিয় সাইটেই বয়স যাচাই ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক ওয়েব ট্রাফিকের এক-চতুর্থাংশ কাভার করে।
অ্যালেক্স কেকসি প্রস্তাব দিয়েছেন, বয়স যাচাই ওয়েবসাইট নয়, ডিভাইস স্তরে করা উচিত। তবে এজ ভেরিফিকেশন প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন (এভিপিএ)-এর ইয়ান করবি বলেন, “এটি অবশ্যই কঠোর হতে হবে, কিন্তু ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব এমন নয়।”
সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ চেলসি জার্ভি মনে করেন, অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্ল্যাটফর্ম এবং ডিভাইস—দুই স্তরের যাচাই ব্যবস্থাই প্রয়োজন, কারণ কোনো একক পদ্ধতিই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            