প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে আগামী ১০ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই চুক্তিতে সই করেন।

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় নতুন মাইলফলক

চুক্তি স্বাক্ষরের পর হেগসেথ এক্স (টুইটার)-এ লিখেছেন, “এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সমন্বয়, তথ্য আদান-প্রদান ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”

এই চুক্তি এমন এক সময়ে হলো যখন দুই দেশ বাণিজ্য উত্তেজনা কমিয়ে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্পের আমলে শুল্কযুদ্ধের পর প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার জেরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা দেখা দেয়। এর আগেই তিনি ২৫% শুল্ক দিয়েছিলেন ভারতীয় পণ্যের ওপর, পরে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে নয়াদিল্লির ওপর আরও ২৫% শুল্ক বৃদ্ধি করেন। এখন সেই বরফ গলানোর চেষ্টা চলছে।

রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য: “নতুন দশকের সূচনা”

চুক্তির পর রাজনাথ সিং এক্সে লিখেছেন, “এটি আমাদের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত ঐকমত্যের প্রতিফলন, যা নতুন দশকের অংশীদারিত্বের দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রতিরক্ষা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হয়ে থাকবে। আমরা একসঙ্গে একটি মুক্ত, অবাধ ও নিয়মভিত্তিক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে চাই।”

বিলম্বের কারণ কী ছিল?

পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রমিত পাল চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, “চুক্তিটি মূলত জুলাই-আগস্টের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান ইস্যুতে ট্রাম্পের মন্তব্য ও কৃতিত্ব দাবি করার কারণে এটি বিলম্বিত হয়।”

তিনি আরও জানান, এই চুক্তি হলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সর্বশেষ সংযোজন, যা দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে, ভারতের জন্য উন্নত প্রযুক্তি পাওয়া সহজতর করেছে এবং উভয়ের প্রতিরক্ষা শিল্পকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে প্রতিরক্ষা ছিল মূল আলোচ্য বিষয়

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তখন ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনবে—যা ভবিষ্যতে এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান কেনার পথও তৈরি করতে পারে।

রাশিয়া নিয়ে মার্কিন ক্ষোভ

তবে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা ও সামরিক সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ভারতের কিছু দ্বিধা ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করেছিল। বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া হলেও, মস্কোর যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে ভারত এখন নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো ও বিকল্প উৎস খোঁজার পথে।

যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে ভারত

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভারত স্পষ্ট করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল, জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বাড়াতে প্রস্তুত। পাশাপাশি, দুই দেশ এখন একটি বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় রয়েছে, যার লক্ষ্য নভেম্বরের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করা।

এই ১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে না, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যেও বড় পরিবর্তন আনবে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

I

news