তাইওয়ান কখনওই চীনের প্রস্তাবিত ‘এক দেশ, দুই সিস্টেম’ নীতি গ্রহণ করবে না বলে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তাইওয়ানকে অবশ্যই নিজের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে এবং নিজস্ব নিরাপত্তা সুরক্ষায় দৃঢ় থাকতে হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর প্রকাশ করেছে।

‘শক্তি দিয়েই আসে প্রকৃত শান্তি’
শুক্রবার উত্তরাঞ্চলের হুকো সামরিক ঘাঁটিতে সেনাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে বলেন:

"আক্রমণকারীর দাবি মেনে নিয়ে সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করলে কখনও শান্তি আসবে না। প্রকৃত শান্তি আসে শক্তির মাধ্যমে। তাই আমরা মর্যাদা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বর্তমান অবস্থা বজায় রাখব এবং একীকরণ বা আগ্রাসনের যেকোনোও প্রচেষ্টার বিরোধিতা করব।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা ‘এক দেশ, দুই সিস্টেম’ প্রত্যাখ্যান করছি, কারণ আমরা আমাদের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক ব্যবস্থা চিরকাল অক্ষুণ্ন রাখব।"

কঠোর অবস্থানে চীন, তবুও ভয় পাচ্ছে না তাইওয়ান
প্রেসিডেন্ট লাইয়ের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীনের তাইওয়ান-বিষয়ক কার্যালয় তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য জানায়নি। তবে এর আগে সপ্তাহের শুরুতে বেইজিং বলেছিল, তাইওয়ান ইস্যুতে তারা ‘শক্তি প্রয়োগের বিকল্প একেবারেই বাদ দেবে না’। সাম্প্রতিক বিবৃতিতে চীনের এই অবস্থান আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠোর, যদিও চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধগুলোতে ‘শান্তিপূর্ণ একীকরণ’ ও ‘স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা’র কথা বলা হয়েছিল।

লাই আরও বলেন, চীন গণপ্রজাতন্ত্র (পিআরসি) ও প্রজাতন্ত্রী চীন (তাইওয়ান)—দুই রাষ্ট্র একে অপরের অধীন নয়। তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব কোনোভাবেই লঙ্ঘন বা দখল করা যাবে না। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার একমাত্র জনগণের।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, "সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতান্ত্রিক জীবনধারা বজায় রাখা কোনও প্ররোচনা নয়। জাতীয় প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ মানে শান্তিতে বিনিয়োগ।"

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির মুখে লাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি)-এর ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যাংকের উদ্বোধন
শুক্রবার প্রেসিডেন্ট লাই তাইওয়ানের প্রথম এম১এ২টি আব্রামস ট্যাংক ব্যাটালিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ডাইনামিক্স নির্মিত এই ট্যাংকগুলো উচ্চ-বিস্ফোরক ট্যাংক-বিধ্বংসী গোলা নিক্ষেপে সক্ষম।

তাইওয়ান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০৮টি এম১এ২টি ট্যাংকের মধ্যে ৮০টি হাতে পেয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রই তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক ও অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। মার্কিন আইনে তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার সক্ষমতা দিতে সহায়তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনও নতুন কোনও অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেননি।

মালয়েশিয়ায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক
এদিকে একই দিনে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুনের সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কার্যক্রম নিয়ে ওয়াশিংটনের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।

এর জবাবে দং জুন বলেন, চীন-তাইওয়ান পুনর্মিলন একটি ‘অপরিবর্তনীয় ঐতিহাসিক ধারা’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতায় স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া।

 

news