দেখতে সাধারণ মাছ ধরার নৌকার মতো, কিন্তু আসলে এগুলো চীনের এক সুক্ষ্ম সামরিক কৌশল। তাইওয়ান প্রণালীর পানিতে এখন চলছে এক 'নিঃশব্দ যুদ্ধ'। যুদ্ধও নয়, আবার শান্তিও নয়—বরং এক ধূসর এলাকার (Gray Zone) সংঘাত, যার লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত ও ভয় দেখানো।
যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) একটি গবেষণায় চীনের এই গোপন কৌশলের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। তারা ৩১৫টি চীনা মাছ ধরার জাহাজের জিপিএস সিগন্যাল ট্র্যাক করে চমকপ্রদ সব তথ্য পেয়েছে।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
গবেষণায় অন্তত ১২৮ থেকে ২০৯টি জাহাজের আচরণ সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এগুলোর বেশিরভাগ সময় কাটে সামরিক প্রশিক্ষণ এলাকার কাছাকাছি, প্রকৃত মাছ ধরা এলাকায় নয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, ২০০-রও বেশি জাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের এআইএস ট্র্যাকিং সিগন্যাল বন্ধ রাখে, যা আন্তর্জাতিক নৌ-আইন লঙ্ঘন।
একটি জাহাজ তো এক বছরেই ১১টি আলাদা আইডেন্টিটি নম্বর ব্যবহার করেছে এবং প্রায় ১,৩০০ বার নিজের অবস্থান গোপন করেছে!
কে চালায় এসব জাহাজ?
গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এসব জাহাজ আসলে চীনের 'মেরিটাইম মিলিশিয়া' নামের একটি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। নামে বেসামরিক হলেও এই বাহিনী সরাসরি চীনের সেনাবাহিনীর (পিএলএ) অধীনস্থ। তাদের কাজই হলো বাণিজ্যিক জাহাজের ছদ্মবেশে সমুদ্রে নজরদারি করা, ভয় দেখানো এবং প্রতিপক্ষের কাজে বাধা সৃষ্টি করা।
                                                                           
                                                                    
                                    
চীনের লক্ষ্য কী?
সিএসআইএস-এর মতে, চীনের মূল লক্ষ্য হলো কোনো সরাসরি যুদ্ধ ছাড়াই তাইওয়ানের উপর ক্রমাগত মনস্তাত্ত্বিক চাপ বজায় রাখা। তারা চায় না যে যুদ্ধ শুরু করলে বিশ্বজুড়ে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হোক। তাই তারা এই 'গ্রে-জোন' কৌশল বেছে নিয়েছে, যেখানে শত্রুতা নেই, কিন্তু শত্রুতার ছায়া দিয়ে কাজ সারা হয়।
                                                                           
                                                                    
                                    
তাইওয়ানের পদক্ষেপ
এদিকে, তাইওয়ান এই গোপন হুমকি মোকাবেলায় তাদের নজরদারি ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। তারা দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন তৈরি করছে, যাতে থাকবে উচ্চক্ষমতার ক্যামেরা ও রাডার সিস্টেম। তাদের লক্ষ্য, চীনের প্রতিটি সন্দেহজনক নড়াচড়া নজরে রাখা।
                                                                           
                                                                    
                                    
বিশ্লেষকদের মতে, সমুদ্র এখন শুধু মাছের জন্য নয়, বরং ক্ষমতার লড়াইয়েরও একটি বিশাল মঞ্চ। চীনের এই কৌশল ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রেও দেখা যেতে পারে, যার প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে গোটা ভূরাজনীতিতে।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            