দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষার পর অবশেষে পর্দা উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর—গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। আগামী শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল জাদুঘর, যা উৎসর্গ করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে।
গিজার পিরামিড থেকে মাত্র এক মাইল দূরে ৪ লাখ ৭০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপনার পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৯২ সালে, আর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৫ সালে। এর কিছু অংশ পরীক্ষামূলকভাবে ২০২৪ সালে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
প্রাচীনতার সাথে প্রযুক্তির মিলন
এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি প্রত্নবস্তু। এর মধ্যে রয়েছে ৩,২০০ বছর পুরোনো রামেসিস দ্বিতীয়ের ৮৩ টন ওজনের বিশাল মূর্তি এবং খুফু ফেরাউনের ৪,৫০০ বছর পুরোনো রাজকীয় নৌকা, যিনি গিজার পিরামিড নির্মাণের জন্য বিখ্যাত।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে রয়েছে ২৪ হাজার বর্গমিটারের স্থায়ী প্রদর্শনী হল, শিশু জাদুঘর, শিক্ষা ও সম্মেলন কেন্দ্র, বাণিজ্যিক জোন এবং অত্যাধুনিক সংরক্ষণাগার। এখানে ১২টি প্রধান গ্যালারিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে রোমান যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের প্রত্নবস্তু প্রদর্শিত হচ্ছে।
পুরোনো কায়রো থেকে নতুন গিজায়
এই জাদুঘরের বেশিরভাগ নিদর্শন আগে কায়রোর তাহরির স্কোয়ারের শতবর্ষী ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে ছিল। পাশাপাশি, সম্প্রতি আবিষ্কৃত কিছু সাকারা নেক্রোপলিস ও আশপাশের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রের নিদর্শনও এখানে স্থান পেয়েছে।
জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী আহমেদ ঘোনেইম জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াতে মিক্সড রিয়েলিটি ও মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন,
“আমরা জেনারেশন জেড-এর ভাষায় ইতিহাস বলছি। তারা বইয়ের লেবেল নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে গল্প শুনতে চায়।”
বিলম্বিত উদ্বোধন, বিশ্বজোড়া আগ্রহ
জাদুঘরটির উদ্বোধন বারবার পিছিয়েছে, সর্বশেষ বিলম্ব হয়েছে গাজা সংকট ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার কারণে। এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা। এর আগেই গিজা পিরামিডে আতশবাজির মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নতুন হাঁটা পথের মাধ্যমে পিরামিডের সাথে জাদুঘরকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মিশরের অর্থনীতি ও পর্যটনের নতুন দিগন্ত
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম মিশরের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ, যেখানে নতুন মেট্রো লাইন ও ২০২০ সালে চালু হওয়া বিমানবন্দরও অন্তর্ভুক্ত।
দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মহামারির পর মিশরের পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের পথে। ২০২৪ সালে দেশটিতে ১ কোটি ৫৭ লাখ পর্যটক এসেছেন—যা নতুন রেকর্ড। সরকার ২০৩২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছে।
হাসান আল্লাম হোল্ডিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হাসান আল্লাম জানান, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার দর্শনার্থী আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন,
“বিশ্ব অপেক্ষা করছিল। এখন সবাই উচ্ছ্বসিত।”
প্রত্নবস্তু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
উদ্বোধনের আগমুহূর্তে প্রত্নবস্তু নিরাপত্তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি কায়রোর এক জাদুঘরের সংরক্ষণাগার থেকে ৩ হাজার বছর পুরোনো সোনার ব্রেসলেটসহ দুটি প্রত্নবস্তু চুরি হয়েছে। এর আগে, ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময়ও বহু প্রত্নস্থল লুট হয়েছিল।
তবুও মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্বমন্ত্রী শরিফ ফাথি আশাবাদী। তিনি বলেন,
“এটি বিশ্বের জন্য মিশরের উপহার। আমরা অবশেষে সেই ঐতিহ্য ভাগাভাগি করতে পারছি—এটাই আমাদের গর্ব।”
এই গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম শুধু প্রাচীন ইতিহাসের প্রদর্শনী নয়, বরং মিশরের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক পর্যটন পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিচ্ছে।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            