২০২৪ সালের এপ্রিলে বাইডেন প্রশাসন টিকটকের মূল চীনা সংস্থা ‘বাইটড্যান্স’-এর ওপর এক বছরের সময়সীমা বেঁধে দেয়—প্ল্যাটফর্মের অংশ বিক্রি করো, না হলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিষিদ্ধ হবে। অথচ এক বছর পর সেই টিকটক নিয়ন্ত্রণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। যেসব সামাজিক মাধ্যমকে ইসরাইল এতদিন গুরুত্ব দিত না, এখন সেগুলোর দিকেই তারা মরিয়া হয়ে ফিরছে—কারণ তারা বুঝে গেছে, প্রচারযুদ্ধে তারা ভয়াবহভাবে পিছিয়ে পড়েছে।
নিউইয়র্কে মার্কিন প্রভাবশালীদের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন,
“যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা যে লড়াই করছি, সেখানে সবচেয়ে বড় অস্ত্র এখন সামাজিক মাধ্যম। আর এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হলো টিকটক—এক নম্বর, এক নম্বর।”
তার এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয়, ইসরাইল এখন মরিয়া। ওয়াশিংটন যেটিকে একসময় নিরাপত্তার ঝুঁকি বলেছিল, তেল আবিব সেটিকেই এখন নিজের বয়ান ছড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
এর আগে মার্কিন সিনেটর মিট রমনি সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, টিকটক ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বরের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তার ভাষায়,
“যদি আপনি টিকটকের পোস্ট দেখেন, ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় অনেক বেশি।”
ইসরাইল নিজেদের প্রচারযন্ত্র চালু রাখতে যা যা সম্ভব সব করেছে—বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে প্রভাব বিস্তার, লবি গোষ্ঠী আর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ, ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রতি পোস্টে ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত পারিশ্রমিক, গুগলের সঙ্গে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের প্রোপাগান্ডা চুক্তি, সাংবাদিক হত্যাকে ন্যায্যতা দিতে সামরিক ‘লেজিটিমাইজেশন সেল’, এমনকি ফেসবুক-ইউটিউব-এক্সে অ্যালগরিদমিক দমন ব্যবস্থাও চালু করেছে। কিন্তু কিছুই কাজ করছে না।
কারণ একটাই—সত্যকে দমন করা যায় না।
টিকটক বাস্তব সময়েই বিশ্বকে দেখিয়েছে, গাজায় কী ঘটছে: উচ্ছেদ, ক্ষুধা, হাসপাতাল ধ্বংস, শিশু হত্যার নির্মম দৃশ্য। গাজার যুদ্ধ হয়ে উঠেছে বিশ্বের সামনে প্রথম “লাইভস্ট্রিমড গণহত্যা”। লাখো মানুষ নিজ চোখে দেখেছে ইসরাইলের নিষ্ঠুরতা।
                                                                           
                                                                    
                                    
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, সরকার ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো একত্রে মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। কিন্তু প্রযুক্তি কখনও নিরপেক্ষ নয়—এটি সেই উদ্দেশ্যের প্রতিফলন, যার হাতে ক্ষমতা থাকে।
ইসরাইলের লক্ষ্য স্পষ্ট: ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বরকে চুপ করানো, সত্যকে গলা টিপে হত্যা করা। কিন্তু তবুও সত্য বেঁচে আছে। গাজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা তাদের ফোন দিয়ে সত্যের আলো জ্বালিয়েছে, নাগরিক সাংবাদিকতা বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছে।
আজ বৈশ্বিক মনোভাব বদলে গেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে যেখানে ৫১% মার্কিন নাগরিক ইসরাইলের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৯%। সাংবাদিক ক্রিস হেজেসের ভাষায়,
“এই গণহত্যা নতুন এক বিশ্বব্যবস্থার সূচনা করেছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তাদের প্রক্সি ইসরাইলসহ একঘরে হয়ে যাবে।”
বিশ্ব আর ইসরাইলের গল্পে বিশ্বাস করে না। তাদের মিথ্যা ধরা পড়েছে, তাদের প্রচারযন্ত্র ভেঙে পড়ছে। সত্যের সামনে কোনো প্রোপাগান্ডা টিকতে পারে না।
ইসরাইল এখন বুঝছে, নিজের ভাবমূর্তি বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো—শিশুহত্যা বন্ধ করা, গণহত্যা থামানো। কোনো ডিজিটাল কৌশলই তাদের নৈতিক পতন থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
আজ ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠস্বরই নতুন শক্তি। যত ক্ষুদ্রই হোক, সেই কণ্ঠস্বরই ইতিহাসকে বদলে দিচ্ছে—প্রমাণ করছে, সত্য সবসময় টিকে থাকে, মিথ্যা নয়।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            