দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে টানা পাঁচ দিনের বৈঠকের পর অবশেষে দুই দেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাল।
বৃহস্পতিবারএক বিবৃতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইস্তাম্বুলে ফের বৈঠক, দুই দেশের প্রতিশ্রুতি
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
                                                                           
                                                                    
                                    
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিভিন্ন শর্ত নিয়ে আগামী ৬ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের আগ পর্যন্ত যাতে কোনো সংঘাত না হয়—সে ব্যাপারে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সরকার সজাগ থাকবে বলেও দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সম্পর্কের অবনতির প্রধান কারণ টিটিপি
পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যা ডুরান্ড লাইন নামে পরিচিত। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় এবং বর্তমানে তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
                                                                           
                                                                           
                                                                    
                                    
এর প্রধান কারণ হলো পাকিস্তানের তালেবানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। এই গোষ্ঠীটিকে বেশ কয়েক বছর আগেই পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও, তারা বেশ ভালোভাবেই টিকে আছে এবং তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া হলো টিটিপির ঘাঁটি এলাকা এবং এর সঙ্গেই সীমান্ত রয়েছে আফগানিস্তানের। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগান তালেবানরা টিটিপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। যদিও আফগানিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সীমান্ত সংঘর্ষ ও মধ্যস্থতা
সংঘাতের শুরু: গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। সেই হামলায় টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হন। পাকিস্তান আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বে আঘাত হেনেছে—এই অভিযোগ তুলে ১১ অক্টোবর সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাচৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালায় আফগান সেনাবাহিনী। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে পাকিস্তানও।
                                                                           
                                                                    
                                    
ক্ষয়ক্ষতি ও যুদ্ধবিরতি: ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই সংঘাতে ২০০-এর বেশি আফগান সেনা এবং ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন। ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে পাকিস্তান-আফগানিস্তান।
আলোচনা: ১৮ অক্টোবর দোহায় দুই দেশের সরকারি প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়। পরে তা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে ২৫ অক্টোবর থেকে বৈঠক শুরু হয়। এই বৈঠকে কাতার এবং তুরস্ক মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়।
চূড়ান্ত সমঝোতা: মাঝে ২৮ অক্টোবর বৈঠক প্রায় ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হলেও, মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতায় তা এড়ানো সম্ভব হয়। ২৯ অক্টোবর থেকে ফের বৈঠক শুরু হয় এবং ৩০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে সম্মত হয় দুই দেশ।
 
                                
                                 
	 
                                 
                     
 
 
 
                                                                                    
 
                                                                                                                          
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                             
                                                                                                                            