যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউনের জের ধরে বন্ধ হয়ে গেছে গরিব মানুষের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম। ফেডারেল বিচারকরা খাদ্য সহায়তা তহবিল চালু রাখার নির্দেশ দিলেও, ট্রাম্প প্রশাসন শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এসএনএপি বা স্ল্যাপ সুবিধা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই তহবিল আবার চালু করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।
আর এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন উইলি হিলেয়ারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা। ৬৩ বছর বয়সী এই বেকার ও বাস্তুহারা বৃদ্ধ তার দুই নাবালক নাতীকে নিয়ে থাকেন নিউইয়র্ক সিটির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে – বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর একটিতে।
হিলেয়ার ছিলেন খাদ্য সহায়তা সুবিধাভুক্ত। ফুড ব্যাংক থেকে তিনি তার নাতীদের জন্য খাবার জোগাড় করতেন। আর নিজে বেঁচে থাকতেন মানবিক সংস্থা হলি অ্যাপোস্টলেস স্যুপ কিচেন অ্যান্ড প্যান্ট্রি থেকে পাওয়া একবাটি স্যুপ খেয়ে। গত কয়েক মাস ধরে এই স্যুপই ছিল তার প্রধান খাবার।
খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হিলেয়ার বললেন, "শাটডাউনে খাদ্য সহায়তা বন্ধ হওয়ায় এখন এই স্যুপটুকুও পাব কি না সন্দেহ। খাদ্য সহায়তা না পেলে, নিজে না খেয়ে নাতীদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।"
পরিসংখ্যান বলছে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২.৬% কৃষ্ণাঙ্গ হলেও, খাদ্য সহায়তা নেওয়া মানুষের মধ্যে তাদের সংখ্যা এক চতুর্থাংশ! এটি অন্যান্য যেকোনো জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় সর্বোচ্চ হার।
ইতিহাসবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্য সহায়তা বন্ধ করা কোনও আকস্মিক সমস্যা নয়, বরং এটি আমেরিকায় শত শত বছর ধরে চলা বর্ণবৈষম্যেরই আরেকটি প্রকাশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "আমেরিকায় বর্ণবৈষম্যের প্রত্যক্ষ কোনও আইন নেই ঠিকই, কিন্তু দীর্ঘকালীন নৃশংসতা, দাসত্বের পর অন্যায্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তাদেরকে ক্রমাগত দমিয়ে রাখছে।"
গত বছর ন্যাশনাল আরবান লীগের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের গড় আয়ের মাত্র ৬৪% আয় করতে পারে। আয়ের এই বিশাল ব্যবধান গত ২০ বছর ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিভিল রাইটসের প্রেসিডেন্ট মার্ক মরিয়াল বলেন, "আমেরিকায় কর্মক্ষেত্রে সুযোগের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের এখনও অনেক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে যখন দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে, তখন আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষই ব্যাপক হারে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন।"
চলতি বছর কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের বেকারত্বের হার ৬.২% থেকে বেড়ে ৭.৫% এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
ম্যাককিনজি ইনস্টিটিউট ফর ব্ল্যাক ইকোনমিক মোবিলিটি এর তথ্য আরও ভয়াবহ – দীর্ঘ সময়ের বৈষম্যের ইতিহাস কাটিয়ে অর্থনৈতিকভাবে শ্বেতাঙ্গদের সমপর্যায়ে আসতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের আরও ৩০০ বছর লাগবে! এবং সেটিও নির্ভর করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বজায় থাকার ওপর।
এমন সংকটময় সময়ে শাটডাউনের অজুহাতে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ এবং অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
