অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার গতি নিয়ে একটা ভয়ংকর খবর বেরিয়েছে। পূর্ব অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের হেক্টোরিয়া হিমবাহ মাত্র ৬০ দিনে তার মোট বরফের প্রায় অর্ধেক হারিয়েছে—এটা ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত পতন! কলোরাডো বোল্ডার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অপ্রত্যাশিত গতি পুরো অ্যান্টার্কটিকার স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। খবর গালফ নিউজের।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালে মাত্র দু’মাসে হেক্টোরিয়া তার মোট বরফের অর্ধেক হারায়। এই গতি দেখে হিমবাহ বিজ্ঞানীরা একেবারে হতবাক, কারণ এটা তাদের আগের সব ধারণাকে উল্টে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৩—এই ১৪ মাসে হিমবাহটি প্রায় ২৫ কিলোমিটার পিছিয়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার, ২০২২-এর নভেম্বর-ডিসেম্বরে মাত্র ৬০ দিনে ৮ কিলোমিটার বরফ গলে যায়, যা হিমবাহের প্রায় ৫০ শতাংশ! গবেষকরা স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে এই দ্রুত ধস নথিভুক্ত করেছেন।
হিমবাহের এই দ্রুত পতনের পেছনে তার অবস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। হেক্টোরিয়া তুলনামূলক সমতল শিলার ওপর বসে আছে। বরফ কমার সঙ্গে সঙ্গে তার অংশ শিলায় আটকে না থেকে সমুদ্রের পানিতে ভাসতে শুরু করে। ভাসমান বরফ স্থির বরফের চেয়ে অনেক বেশি অস্থির, ফলে দ্রুত ভেঙে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেরিন আইস শিট ইনস্ট্যাবিলিটি।
গবেষণা দলের প্রধান লেখক নাওমি ওচওয়াট ২০২৪-এর শুরুতে হিমবাহের ওপর দিয়ে উড়ে যান। স্যাটেলাইট ডেটা থেকে বড় পরিবর্তনের আশঙ্কা করলেও, চোখের সামনে যা দেখেন তা আরও ভয়ংকর। ওচওয়াট বলেন, ‘হেক্টোরিয়ার ওপর দিয়ে উড়ার সময় যে বিশাল এলাকা ধসে গেছে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।’
এটা শুধু একটা হিমবাহের সমস্যা নয়, পুরো অ্যান্টার্কটিকার জন্য সতর্কবার্তা।
বিজ্ঞানী টেড স্ক্যাম্বোস বলেন, হেক্টোরিয়ার এই গতি তাদের আগের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এটা অন্য বড় হিমবাহগুলোর জন্য গুরুতর সংকেত। এত দ্রুত পতন সত্যিই চমকপ্রদ।
স্ক্যাম্বোস সতর্ক করে বলেন, যদি অন্য জায়গায়ও একই পরিস্থিতি হয়—বিশেষ করে যেখানে বড় হিমবাহ সমতল শিলার ওপর—তাহলে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় ভয়াবহ প্রভাব পড়বে।
জানিয়ে রাখি, অ্যান্টার্কটিকায় এত বরফ আছে যে পুরোটা গলে গেলে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রায় ৬০ মিটার বাড়তে পারে। এই গবেষণা অ্যান্টার্কটিক হিমবাহের স্যাটেলাইট নজরদারিকে আরও জরুরি করে তুলেছে।
