যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত রাজনীতিকদের একজন ডিক চেনি আর নেই।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট চেনি ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন।

তার পরিবার জানিয়েছে, তিনি নিউমোনিয়া ও হৃদরোগে (কার্ডিয়াক সমস্যা) ভুগছিলেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সিএনএন এক প্রতিবেদনে চেনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

 দুই মেয়াদে ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রভাবশালী নেপথ্য নায়ক

২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চেনি।
এই সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন ওয়াশিংটনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও বিতর্কিত ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের মূল স্থপতি হিসেবে পরিচিত।

রাজনীতিতে অনেকে তাকে রূপকভাবে “প্রকৃত প্রেসিডেন্ট” বলেও উল্লেখ করতেন, কারণ দৃশ্যপটের আড়াল থেকে তিনি বুশ প্রশাসনে বিরাট প্রভাব বিস্তার করতেন।

 ৯/১১ হামলার দিন থেকেই বদলে যান চেনি

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, যখন দ্বিতীয় বিমানটি নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে, তখন বুশ ছিলেন শহরের বাইরে, আর চেনি ছিলেন হোয়াইট হাউসে।

সেই ঘটনার পর চেনি বলেন,

“সেই মুহূর্তেই বুঝেছিলাম, এটি একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা।”

তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আল-কায়েদার প্রতিশোধ নিতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে— যা পরিণত হয় ‘আগাম যুদ্ধের নীতি’ ও শাসন পরিবর্তনের কৌশলে।

কোনো অনুশোচনা নয়, নিজের সিদ্ধান্তে অটল

জীবনের শেষ পর্যন্ত চেনি কখনো অনুশোচনা করেননি।
তার বিশ্বাস ছিল, তিনি যা করেছেন তা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।
সেই সিদ্ধান্ত থেকেই শুরু হয় দুই দশকব্যাপী ইরাক ও আফগান যুদ্ধ, যা পরবর্তীতে দেশটির রাজনীতিকে বিভক্ত করে দেয়।

২০১৪ সালে মার্কিন সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এনহ্যান্সড ইন্টারোগেশন মেথড’ ছিল “বর্বর ও অকার্যকর”।
তবে চেনির জবাব ছিল স্পষ্ট—

“আমি মুহূর্তের মধ্যে আবারও তা করতাম।”

🇺🇸 ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান ও রাজনৈতিক ভাঙন

জীবনের শেষভাগে চেনি নিজের দল রিপাবলিকান পার্টি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “কাপুরুষ” ও “গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হুমকি” বলে আখ্যা দেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করে বলেন,

“দেশের সংবিধান রক্ষার জন্য দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে আগে রাখতে হবে।”

তবে চেনির সতর্কতা সত্ত্বেও, কয়েক মাস পর ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

ডিক চেনি ছিলেন একাধারে কৌশলী, দৃঢ়, বিতর্কিত ও প্রভাবশালী নেতা—
যার ছায়া আজও মার্কিন রাজনীতি, নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিতে বিদ্যমান।

 

news