চলতি বছরের জুনে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধে হঠাৎ করেই সরাসরি জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। কেন এবং কীভাবে ওয়াশিংটন এই সংঘাতে নামল—সে প্রশ্নের অনেকটাই উত্তর দিয়েছে মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তেহরানের মধ্যে পাঁচ দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়। এই আলোচনার মধ্যেই ১৩ জুন আচমকা ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল, যা পুরো পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দেয়।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে একটি চূড়ান্ত পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়—হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন বন্ধ করতে হবে, ফোর্দোসহ গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বন্ধ করতে হবে। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ওয়াশিংটন।

কিন্তু তেহরান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতেই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হামলা চালায় ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ইসফাহান, নাতাঞ্জ ও ফোর্দোতে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে ইরানে হামলার একটি চার ধাপের পরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন।

ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী—
প্রথম ধাপে ইসরাইল একাই হামলা চালাবে।
দ্বিতীয় ধাপে সীমিত মার্কিন সহায়তায় নেতৃত্ব দেবে ইসরাইল।
তৃতীয় ধাপে দুই দেশ পূর্ণ সহযোগিতায় অভিযান চালাবে।
আর শেষ ধাপে সরাসরি নেতৃত্ব নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

এই বৈঠকের পর থেকেই কয়েক মাস ধরে চলে গোপন কৌশলগত প্রস্তুতি। প্রতিবেদনের দুটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকাশ্যে ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের কথা বললেও পর্দার আড়ালে ইসরাইলের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান চালু রেখেছিলেন।

এদিকে ইরানের সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবলফাজেল শেকারচি দাবি করেন, ১২ দিনের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের গুপ্তচর নেটওয়ার্ক কার্যত ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ শেষে ইরানের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া বলেন, ইরান যেন ভবিষ্যতে আর কখনো পারমাণবিক প্রকল্প শুরু করতে না পারে—এটা নিশ্চিত করাই ইসরাইলের লক্ষ্য। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে এমন ক্ষতি করা হয়েছে, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

 

news