ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া। তিনি বলেছেন, ইরান যেন কখনো আবার তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে না পারে—এটা নিশ্চিত করা ইসরায়েলের দায়িত্ব। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলার প্রায় ছয় মাস পর এমন মন্তব্য করলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ১৮ ডিসেম্বর টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়েছে।

জেরুজালেমে মোসাদের গোয়েন্দা সদস্যদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বারনিয়া বলেন, ইসরায়েল ধ্বংসের শপথ নেওয়া একটা দেশ হিসেবে ইরান এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই—সামরিক পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্য ছাড়া। সুযোগ পেলেই তারা দ্রুত সেই পথে এগোবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

তার ভাষায়, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরায়েলের দায়িত্ব হলো—এই প্রকল্প যেন আর কখনো সক্রিয় না হতে পারে, তা নিশ্চিত করা।

২০২৬ সালের জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া মোসাদ প্রধান ইসরায়েলের আকস্মিক সামরিক অভিযানের প্রশংসা করেন। তার মতে, এই অভিযান ইরানের ভেতরে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ এবং তথ্য সংগ্রহের সক্ষমতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে।

বারনিয়া আরও বলেন, এক মুহূর্তেই আয়াতুল্লাহদের শাসন বুঝে গেছে—ইরান পুরোপুরি উন্মুক্ত ও অনুপ্রবেশযোগ্য। তবে এত কিছুর পরও তারা ইসরায়েল ধ্বংসের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি।

ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সমাধান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন মোসাদ প্রধান। তার দাবি, ইরান আবারও বিশ্বকে বিভ্রান্ত করে একটা খারাপ পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েল এমন কোনো খারাপ চুক্তি হতে দেবে না।

পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ করে আসছে। যদিও ইরান তা অস্বীকার করে, তবে শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সীমা ছাড়িয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের কাজে বাধা দেওয়া এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্প্রসারণ করেছে। যুদ্ধ শুরুর সময় ইসরায়েল দাবি করে, ইরান তখন অস্ত্রায়নের দিকে বাস্তব পদক্ষেপ নিচ্ছিল।

ইরানের দাবি অনুযায়ী, জুনের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় দেশটিতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। জবাবে ইরান ইসরায়েলের দিকে ৫০০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ১ হাজার ১০০টি ড্রোন নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, এতে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওমানের মধ্যস্থতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও, ট্রাম্প নির্ধারিত ৬০ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলি হামলার মধ্য দিয়ে সেই আলোচনা ভেঙে পড়ে।

 

news