পাকিস্তানের করাচিতে জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে বেলুচিস্তানের একটি ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী। এতে দুই চীনা নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ১০ ব্যক্তি। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছেন অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, পাকিস্তানের চীনা দূতাবাস বলেছে যে, এটি একটি ‘সন্ত্রাসী’ হামলা। চীনা নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েক জন স্থানীয় মানুষও হতাহত হয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে মৃতের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
চীনা দূতাবাস আরও জানিয়েছে, দেশটির সিন্ধু প্রদেশে বিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করা চীনা প্রকৌশলীদের একটি কাফেলাকে লক্ষ্য করে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছন্নতাবাদী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে কিছু প্রকল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী সংগঠনটি বলেছে, তারা চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং বিনিয়োগকারীদের একটি কাফেলাকে টার্গেট করে এই হামলা চালিয়েছে। কাফেলাটি করাচি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগেই এ হামলা চালিয়েছে তারা।
সংগঠনটির দ্বিতীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি একটি আত্মঘাতী হামলা ছিল। হামলাকারীর নাম শাহ ফাহাদ। তিনি বিএলএ-এর মাজিদ ব্রিগেডের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
বিএলএ-এর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যানবাহিত ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 
চীনা দূতাবাস জানিয়েছে যে, প্রকৌশলীরা চীনা-অর্থায়নকৃত এন্টারপ্রাইজ পোর্ট কাসিম পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। করাচির কাছে পোর্ট কাসিমে নামে দুটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা।

প্রকল্পটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ, যা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো এবং শক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, যেখানে গ্যাস এবং খনিজ সহ প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ সরবরাহ রয়েছে।

বিএলএ অন্যান্য জাতিগত বেলুচ গোষ্ঠীর সাথে একটি পৃথক স্বদেশের জন্য দীর্ঘকাল ধরে  লড়াই করছে। তারা নিয়মিতভাবে এই অঞ্চলে চীনা নাগরিকদের টার্গেট করেছে।   তাদের দাবি, জাতিগত বেলুচ বাসিন্দারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আহরিত সম্পদের হতে তাদের অংশ পাচ্ছে না।

সোমবার চীনা দূতাবাস পাকিস্তানে তার নাগরিক এবং চীনা উদ্যোগকে সতর্ক থাকতে এবং নিরাপত্তা সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দূতাবাস আরও বলেছে, এই  হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে। খুনীকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। 

এদিকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য পাকিস্তানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরই মাঝে করাচি শহরের আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, স্থানীয় মিডিয়ার ফুটেজে ঘন কালো ধোঁয়া ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি দেখা গেছে। 

সিন্ধুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিয়াউল হাসান লাঞ্জার বলেছেন,  আজ বিস্ফোরণটি সন্দেহভাজন ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) দ্বারা  ঘটে থাকতে পারে। অনলাইনে দেখা গেছে, নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এবং দমকলকর্মীরা বিস্ফোরণের স্থানটি ঘুরে তদন্ত করছেন। বিস্ফোরণের জেরে  বেশ কয়েকটি যানবাহন পুড়ে গেছে।

একজন পুলিশ সার্জন, ডা. সুমাইয়া ডন নিউজকে বলেছেন, ‘সঙ্কটজনক অবস্থায় ১০ জন আহত ব্যক্তিকে জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল কলেজ (জেপিএমসি) আনা হয়েছে।’

এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের কাছে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিন চীনা শিক্ষক এবং একজন পাকিস্তানি ড্রাইভারকে হত্যা করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে করাচিতে চীনা কনস্যুলেটে হামলায় বন্দুকধারীরা কমপক্ষে চারজনকে হত্যা করেছিল। হাজার হাজার চীনা শ্রমিক পাকিস্তানে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বেইজিংয়ের বহু বিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক করিডোর তৈরিতে যুক্ত।

news