লেবাননের স্বার্থ রক্ষার গ্যারান্টি হয়ে উঠছে হিজবুল্লাহর প্রতিরোধকামী অস্ত্র!

লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ দেশটির উপকূলীয় ‘কারিশ’ গ্যাস ক্ষেত্রের দিকে তিনটি নিরস্ত্র ড্রোন পাঠিয়েছে।

গ্যাস ক্ষেত্রটি ইহুদিবাদী ইসরাইলের সীমান্ত থেকে একশো কিলোমিটার দূরে অবস্থান করলেও তেল আবিব শাসক গোষ্ঠী ওই এলাকাকে নিজেদের অর্থনৈতিক জোন হিসেবে দাবি করছে। গ্যাস ক্ষেত্রটিতে প্রায় ২০৩ ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী এখন নিজেকে ভোক্তা থেকে জ্বালানি রপ্তানিকারকে পরিণত করার পাশাপাশি নিজের উন্নয়নবাদী নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসরাইল এখন এ গ্যাসক্ষেত্রকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। 

ইউক্রেন যু্দ্ধের ফলে রাশিয়া গ্যাস রপ্তানী কমিয়ে দেয়ায় ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে জ্বালানির চাহিদা ব্যাপকমাত্রায় বেড়ে গেছে এবং ইহুদিবাদী ইসরাইল এখন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 

এইক্ষেত্রে ইসরাইল পশ্চিমা দেশগুলোকে তার সাথে আনতে চায় এবং এই বিষয়ে তেল আবিব শাসক গোষ্ঠী সম্প্রতি গ্যাসক্ষেত্রে খনন করার জন্য একটি ব্রিটিশ-গ্রীক কোম্পানির সঙ্গেও একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে এবং একই সঙ্গে এর নিরাপত্তার নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছে। অন্যদিকে কিছু সংবাদ মাধ্যম সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে ইসরাইল আমেরিকার কাছে এর দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে এবং গ্যাসক্ষেত্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাত দুটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এই বিতর্কিত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতে গতকাল গ্যাস ক্ষেত্রের দিকে হিজবুল্লাহর তিনটি অনুসন্ধানী ড্রোন পাঠানোর পদক্ষেপ থেকে এটা অনুধাবন করা যাচ্ছে যে হিজবুল্লাহ কোনো অবস্থাতেই লেবাননের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না।

লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিভিন্ন মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এটা বলা যেতে পারে যে লেবাননের অধিকাংশ মানুষ একমত যে নিজেদের দেশে বিদ্যমান চরম দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে কাটিয়ে ওঠার জন্য অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ এবং রিজার্ভ থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল তারা প্রথম পদক্ষেপেই দেখেছে যে ওয়াশিংটন প্রশাসন যথারিতী তেল আবিব শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ নিয়েছে। এমনকি কিছু সূত্রের মতে বিতর্কিত এলাকায় ড্রিলিং কার্যক্রমের নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটন সেখানে জাহাজও পাঠিয়েছে।

ইতিমধ্যে, লেবাননের সরকার তার গ্যাস এবং তেল সম্পদের ব্যবহারের বিষয়ে একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট খুলেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতিও ঘোষণা করেছেন যে তার নতুন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে এসব জ্বালানি সম্পদ থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সুবিধা গ্রহণ করা। কিন্তু এসব সম্পদ রক্ষার জন্য হিজবুল্লাহর অস্ত্র ব্যতীত বিকল্প কোন গ্যারান্টি লেবাননের হাতে নেই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বলা যায় যে লেবাননের গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েলের আগ্রাসন রুখে দিতে হিজবুল্লাহর অস্ত্র সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে সাম্প্রতিক বছর ও দশকে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার ও রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা চলে এসেছে লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি তা ব্যর্থ করে দিয়েছে।খবর পার্সটুডে /এনবিএস/ ২০২২/একে 

news