বাংলাদেশি নাগরিক দাবি করে জোরপূর্বক সীমান্তে ঠেলে পাঠানো অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তার আট বছর বয়সী ছেলেকে অবশেষে ভারতে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এই সিদ্ধান্ত জানায় নয়াদিল্লি। বুধবার প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আদালত সোনালি বিবি ও তার মতো অন্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থার নির্দেশও দিয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বাসিন্দা সোনালি বিবি কাজের সন্ধানে পরিবারসহ দিল্লি গিয়েছিলেন। গত জুনে বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের আটক করা হয়। এরপর আসাম সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে প্রবেশের পর পুলিশ তাদের অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংশোধনাগারে ছিলেন এবং পরবর্তীতে জামিন পান।

ভারতীয় নাগরিকত্বের সকল প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট যখন ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেয়, তখনও কেন্দ্রীয় সরকার দেরি করছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মানবিক কারণে তাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর নির্দেশ দেন। অবশেষে বুধবার তুষার মেহতা আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় সরকার সোনালি বিবিদের দেশে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।

সোনালি বিবি বহুবার জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত ভারতে ফিরতে চান—বিশেষ করে তার সন্তান যেন ভারতে জন্ম নিতে পারে। আদালতও তা গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। তুষার মেহতা জানান, তাদের দিল্লিতে আনা হবে। তবে প্রধান বিচারপতি বলেন, তাদের সরাসরি বীরভূমের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক, যেখানে স্থানীয় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোনালির চিকিৎসা দেখভাল করবেন। এছাড়া তার প্রসবসংক্রান্ত সব চিকিৎসা বিনামূল্যে নিশ্চিত করার নির্দেশও দেয় আদালত। সোনালির ভারতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য সামিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সোনালি বিবিরা দেশে ফিরতে পারবেন না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আদালত সোনালিসহ আরও ছয়জনকে জামিন দিয়েছে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, সোনালি যেকোনো সময় সন্তান প্রসব করতে পারেন—এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে মামলার রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা দেশে ফিরতে পারবেন না।

বর্তমানে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলায় জিম্মাদার ফারুক হোসেনের বাড়িতে থাকতে পারবেন। আগামী ২৩ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা হলেন—পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের পাকুরের দানিশ শেখ (২৮), তার স্ত্রী সোনালি বিবি (২৬), সুইটি বিবি (৩৩) ও তার দুই সন্তান, মো. কুরবান দেওয়ান (১৬)। এছাড়া সুইটি বিবির আরও এক সন্তান মো. ইমাম দেওয়ান (৬) ও সোনালির সন্তান সাব্বির শেখ (৮) কারাগারে আটক থাকলেও মামলার আসামি ছিলেন না।

 

news