ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা আবারও চরমে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—ইউক্রেনীয় সেনারা দনবাস ছাড়বে, নইলে রাশিয়া বলপ্রয়োগ করে এলাকা দখল করবে। ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবেই জানান, “হয় আমরা শক্তি দিয়ে অঞ্চল মুক্ত করব, নয়তো তারা পিছু হটবে।” বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৮৫ শতাংশই মস্কোর নিয়ন্ত্রণে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য এই দাবি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। পুতিনের কঠোর মন্তব্য এল এমন সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন—মস্কোতে বৈঠকের পর তার প্রতিনিধিদের বিশ্বাস, পুতিন “যুদ্ধ শেষ করতে চান।” ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন।
ট্রাম্প জানান, ক্রেমলিনে বৈঠক ‘ভালো’ হলেও দু’পক্ষের সহযোগিতা জরুরি। মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার প্রথম খসড়ায় দনবাসের যেসব এলাকা ইউক্রেনের দখলে আছে সেগুলো কার্যত রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, যদিও সংশোধিত খসড়া পরে মস্কোতে উপস্থাপন করা হয়।
ভারত সফরের আগে ইন্ডিয়া টুডে-কে পুতিন বলেন, উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি সংশোধিত পরিকল্পনার কপি দেখেননি—এ কারণেই আলাপ-আলোচনায় সময় বেশি লেগেছে। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের কিছু অংশে রাশিয়া সম্মত হলেও কয়েকটি বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হওয়া সম্ভব নয়। কোন বিষয়গুলোতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।
রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ভবিষ্যৎ এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার মতো অন্তত দুটি বিষয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে। পুতিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, আলোচনায় কোনো সমঝোতা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতি মস্কোর দর-কষাকষির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ধীরগতিতে চালাচ্ছে, যাতে আরও ভূখণ্ড দখলের সময় পাওয়া যায়। ক্রেমলিন বৈঠক নিয়ে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্ড্রি সিবহিয়া সরাসরি বলেন, “পুতিন বিশ্বের সময় নষ্ট করছেন।”
ইউক্রেন শুরু থেকেই যেকোনো চুক্তিতে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়ে আসছে। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষের বাস্তব সুযোগ তৈরি হলেও রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখা প্রয়োজন—কারণ ইউরোপীয় মিত্রদের মতে, মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনায় বিলম্ব ঘটাচ্ছে।
গত সপ্তাহে জেলেনস্কি জানান, জেনেভায় মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় তারা শান্তি পরিকল্পনার মূল খসড়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তারা একটি ‘হালনাগাদ ও পরিশীলিত শান্তি কাঠামো’ তৈরি করেছে—তবে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস জেলেনস্কিকে সতর্ক করে বলেছেন—“আগামী কয়েক দিনে খুব সাবধান থাকতে হবে। তারা তোমাদের সঙ্গে খেলছে, আমাদের সঙ্গেও খেলছে।”
