মস্তিষ্কের এক-চতুর্থাংশ জুড়ে থাকা অ্যাস্ট্রোসাইট নামের নীরব কোষগুলোকে এতদিন সহায়ক ভেবেই উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, আচরণ, স্মৃতি, শিখন, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের পেছনে এই কোষগুলোর রয়েছে অদেখা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।
বিখ্যাত সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে—নিউরন তথ্য পাঠায় ঠিকই, কিন্তু সেই সংকেত কত দ্রুত যাবে, কতটা শক্তিশালী হবে, বা কতটা প্রভাব ফেলবে—এসবকিছুর সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ থাকে অ্যাস্ট্রোসাইটের হাতে। আগে যাদের ‘সহায়ক কোষ’ বলা হতো, তারাই এখন মস্তিষ্ক–বিজ্ঞানের নতুন তারকা।
উনিশ শতক থেকেই জানা ছিল—মস্তিষ্কে নিউরন ও গ্লিয়া, দুই ধরনের প্রধান কোষ আছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতায় পুরো একশ বছর গবেষণা চলে শুধু নিউরন ঘিরে। গ্লিয়া—বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোসাইট—পড়েছিল অন্ধকারেই।
নতুন ক্যালসিয়াম ইমেজিং প্রযুক্তি দেখিয়েছে, অ্যাস্ট্রোসাইটও নিজেদের মধ্যে এবং নিউরনের সঙ্গে ধীরগতির ক্যালসিয়াম সংকেতে যোগাযোগ করে। এই সংকেত আয়ন, নিউরোট্রান্সমিটার এবং বিভিন্ন বিপাকীয় উপাদানের মাত্রা বদলে দিয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলে নিউরনের সক্রিয়তায়। আরও চমকপ্রদ তথ্য—একটি অ্যাস্ট্রোসাইট তার হাজারো শাখা ছড়িয়ে দুই মিলিয়ন পর্যন্ত সিন্যাপসের সঙ্গে সংযোগ রাখতে পারে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের গবেষকেরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখেছেন, মস্তিষ্কের ‘মাস্টার ক্লক’ হিসেবে পরিচিত সুপ্রাকিয়াজম্যাটিক নিউক্লিয়াস (এসসিএন) অ্যাস্ট্রোসাইট ছাড়া ২৪ ঘণ্টার জৈবিক ছন্দ ঠিক রাখতে পারে না। দিনে অ্যাস্ট্রোসাইট বেশি গাবা শোষণ করে আর রাতে কম—এই ওঠানামাই ঘুম–জাগরণের সময়সূচি ঠিক রাখে।
এছাড়া ইসরায়েল ও জাপানের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে—পুরস্কারের স্মৃতি, ভয়ের স্মৃতি এবং শেখার বিভিন্ন ধাপেও অ্যাস্ট্রোসাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিউরনের দ্রুত সংকেত মিলিসেকেন্ডে শেষ হলেও অ্যাস্ট্রোসাইটের ধীর সংকেত টিকে থাকে ঘণ্টা থেকে দিন পর্যন্ত—যা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি গঠনে সহায়ক।
এখন প্রশ্ন উঠছে—আলঝেইমার, পারকিনসন বা মানসিক অবসাদের মতো রোগগুলোতেও কি অ্যাস্ট্রোসাইটের ভূমিকা রয়েছে? গবেষকেরা বলছেন—মস্তিষ্ক সম্পর্কে আমাদের ধারণা যে বদলে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত। এতদিন যাদের ‘নীরব’ বলা হয়েছিল, সেই অ্যাস্ট্রোসাইটই হয়তো আসল গল্পের কেন্দ্রবিন্দু।
