রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবার ভারতকে এক 'নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ' জারি রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই আশ্বাস এমন এক সময়ে এল, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চরম চাপ রয়েছে। সেই চাপ উপেক্ষা করেও ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করেনি। উল্টোদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল এই রুশ তেল কেনার জন্যই। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর নিশ্চিত করেছে।

শুক্রবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ বৈঠক হয় পুতিনের। সেখানেই তিনি সরাসরি বলেন, "ভারতের মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য আমরা জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত। তেল, গ্যাস, কয়লা - ভারতের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য যা যা দরকার, তার সবকিছুর নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হলো রাশিয়া।"

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল পুতিনের প্রথম ভারত সফর। তাই তাকে দেওয়া হয় বিশাল রাজকীয় সংবর্ধনা। গার্ড অব অনার থেকে শুরু করে ২১ তোপের সেলামি - কোনো আয়োজনেরই কমতি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী মোদি পুতিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তাঁর 'অটল প্রতিশ্রুতির' জন্য ভারত ধন্যবাদ জানাচ্ছে। মোদি আরও বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্বের এক অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যদিও তিনি সরাসরি তেলের বিষয়টি উল্লেখ করেননি।

২০২৪ সালে দেখা গেছে, ভারত মোট যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, তার প্রায় ৩৬ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভারত সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমিয়েছিল রুশ তেল আমদানি।

শীর্ষ বৈঠকে পুতিন মোদিকে ইউক্রেন পরিস্থিতি এবং সেখানে শান্তি আনার প্রচেষ্টা সম্পর্কে 'বিস্তারিত তথ্য' দিয়েছেন। জবাবে মোদি স্পষ্টভাবে জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে ভারত সবসময়ই শান্তির পক্ষে।

বাণিজ্যিক দিক থেকেও দুই দেশের সম্পর্ক এখন অনেক মজবুত। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে, যা মহামারির আগের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি। তবে এর মধ্যে ভারতের রফতানি ছিল মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। দুই নেতা ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা কর্মসূচিতেও একমত হয়েছেন। চাকরি, স্বাস্থ্য, শিপিং এবং রাসায়নিক খাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হয়েছে এই সফরে।

প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্যই ছিল এই শীর্ষ বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয়। ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। তবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রুশ অস্ত্রের অংশ কমে ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বৈঠকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান এবং পারমাণবিক সাবমেরিন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। রাতেই রাষ্ট্রীয় ভোজের পর পুতিন ভারত ছেড়ে চলে যাবেন।

 

news