গাজা ও ইউক্রেন সংকটে পাশ্চাত্যের ভণ্ডামির নানা রহস্য!

ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেফ বোরেল আন্তর্জাতিক বিষয়ে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী নীতি ও আচরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের গাজার জনগণের বিষয়ে ই-ইউ'র নীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ বিষয়ে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড থাকার বিষয়টি স্বীকার করে মার্কিন সরকারের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন।

বোরেল বলেছেন, দ্বিমুখী নীতি প্রয়োগে বিষয়ে প্রায়ই আমরা প্রতিবাদের মুখোমুখি হচ্ছি। আন্তর্জাতিক নীতি ব্যাপক মাত্রায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চর্চার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা সব বিষয়ে একই নীতি বা স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করছি না। 


তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দেয়ার পশ্চিমা নীতিকে 'নৈতিক আবশ্যকতা' হিসেবে উল্লেখ করলেও গাজার বিষয়ে বলেছেন, গাজা উপত্যকা খোলা আকাশের নীচের একটি কারাগার হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার জনগণের সমস্যা সমাধানের এখতিয়ার ইউরোপীয় জোটের হাতে নেই।  

জোসেফ বোরেলের বক্তব্য থেকে ইউরোপের স্বার্থান্ধকামী নীতিই স্পষ্ট হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ইউরোপের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থসহ নানা স্বার্থকে হুমকিগ্রস্ত করায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। রাশিয়া যাতে এ যুদ্ধে জিততে না পারে সেজন্য ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সাহায্য দিয়েছে এই জোট গত ৬ মাসে। তাই এ বিষয়ে ইউরোপ ও মার্কিন সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে গাজার মজলুম ও দরিদ্র জনগণ গত ১৫ বছর ধরে ইসরাইলের সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা ও নৃশংস হামলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও বোরেল এ বিষয়ে তার জোটের কিছুই করার নেই বলে দাবি করে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব কেবল মার্কিন সরকারের ওপর চাপিয়ে দিলেন! তিনি গাজার জনগণের অবস্থাকে লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক বলে অভিহিত করলেও সেখানকার মানবীয় সংকটের মূল কারণ যে বর্ণবাদী ইসরাইল তা উল্লেখ করেননি, বরং অদ্ভুত এক সাফাইয়ের আশ্রয় নিয়ে বলেছেন, মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে শক্তিশালী কোনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া পশ্চিম এশিয়ার এই সংঘাত সমাধানের কোনো পথ নেই!  

ইহুদিবাদী ইসরাইল বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। অবৈধ এই  রাষ্ট্রের অবৈধ শাসকগোষ্ঠী ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত গাজার ওপর চার বার যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে  নারী ও শিশুসহ চার হাজার ফিলিস্তিনিকে শহীদ করেছে। এদের মধ্যে অন্তত এক হাজারই ছিল শিশু! জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল বিশেলেত বলেছেন, গাজা হচ্ছে খোলা আকাশের নীচে থাকা বিশ্বের বৃহত্তম কারাগার!

ইউরোপ মাঝে মধ্যে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের কেবল মৌখিক নিন্দা জানালেও মার্কিন সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে অবৈধ এই শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমা সরকারগুলো ইসরাইলি হানাদারদের মোকাবেলায় ফিলিস্তিনি জিহাদি দলগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা পদক্ষেপের নিন্দা জানাতেও অভ্যস্ত! অথচ এইসব সরকার দখলদার ইসরাইলকে বিধ্বংসী নানা অস্ত্র দিয়েও সাহায্য করছে যা দিয়ে গণহত্যা চালিয়ে থাকে ইসরাইল। আসলে মজলুম ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের প্রধান সহযোগী হল মানবাধিকারের সমর্থক হওয়ার দাবিদার পাশ্চাত্য।।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news